প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস আজ ।। দেশে প্রায় ৯০ লাখ রোগী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিস জনিত রোগে সারা বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ১ জন লোক মারা যায়। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৪ কোটি মানুষ মারা যায় ডায়াবেটিসের কারণে। এছাড়া ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর পা কেটে ফেলার অন্যতম কারণও ডায়াবেটিস। ফলে রোগটি চিহ্নিত হয়েছে একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি হিসেবে। আর বিশ্বব্যাপী এই রোগের ভীতিকর প্রভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে জাতিসংঘ। যক্ষ্মা ও এইচআইভি/এইডসসহ নানা সংক্রামক রোগের পাশাপাশি কোনো অসংক্রামক ব্যাধিকে প্রথমবারের মতো বিশ্বজনীন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেটি হলো ডায়াবেটিস। আতংকের বিষয়, প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি দুজন মানুষের একজন জানেন না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর পেছনে সচেতনতার অভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি ভয়ানক পরিস্থিতি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার আহমেদ মিলন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে চিকিৎসায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। কিন্তু শনাক্তই যদি না হয়, ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে চোখ, কিডনি ও হার্ট অন্যতম। আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে এই ডায়াবেটিস মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। তাই নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি বলছেন ডা. মিলন।
অন্যদিকে, প্রতি ৭ জন গর্ভবতী নারীর ১ জনের শরীরে ডায়বেটিস ধরা পড়ছে বলে জানালেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার লিপি। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটি গভীর আতংকের বিষয়। কারণ, নারীর গর্ভধারণের আগে বা গর্ভকালীন সময়ে সচরাচর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো হয় না। গর্ভবতী নারীর শরীরে ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভের শিশুটিও ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। অথচ, প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু ধরা না পড়লে মায়ের পাশাপাশি শিশুর যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই সচেতন হওয়ার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব শরীরে ডায়বেটিস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আর আগে বয়স্করা ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হলেও বর্তমানে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের শরীরে ডায়াবেটিস বেশি ধরা পড়ছে বলে জানান হাসিনা আক্তার লিপি। বেশি বেশি ধূমপান, ক্রুটিযুক্ত খাদ্যাভাস ও শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণেই তরুণরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৪২৫ মিলিয়ন (৪২ কোটিরও বেশি)। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের এ সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫৫ কোটিতে। আর বাংলাদেশে বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছেই। তবে শঙ্কার বিষয় হলো প্রতি দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এখনও জানতে পারছেন না যে তার ডায়াবেটিস রয়েছে।
এরই মাঝে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনেই প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামেও নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগে নগরীর খুলশীস্থ ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সুধী সমাবেশ এবং আদর্শ ডায়াবেটিস রোগীদের সম্মাননা প্রদানসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য একুশে পদক প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেককে এ অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হবে। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চমেক হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিভাগও দিবসটি পালন করবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার আহমেদ মিলন।
ডায়াবেটিসের জন্য চট্টগ্রামের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। হাসপাতালে প্রাপ্ত বয়স্ক (টাইপ-২) নিবন্ধিত (নিয়মিত চিকিৎসা সেবাগ্রহণকারী) রোগীর সংখ্যা বর্তমানে দুই লাখ ছাড়িয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক টাইপ-১ (১- ১৮বছর) রোগীর সংখ্যাও কয়েক হাজার। আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল শহরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গ্রামে-গঞ্জেও শাখা স্থাপন করছে। এছাড়া খুলশীস্থ হাসপাতালে আউটডোর এবং ইনডোর দুই বিভাগেই সেবা প্রদান তো রয়েছেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিকার হিসেবে জীবন যাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বারোপ করে শুধু সচেতন হলে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ রোগ ৭০ ভাগ প্রতিরোধ সম্ভব বলেও জানান চিকিৎসকরা। আর ডায়াবেটিস আক্রান্তের নেপথ্যে কায়িক পরিশ্রম না করা (যেমন সামান্য দূরত্বে রিকসা বা যানবাহন নেয়া), মোটা হওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখা, ফাস্ট ফুড খাওয়া ও কোমল পানীয় পান করাকেই অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য ব্যবস্থা অর্থাৎ সুষম খাদ্য ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হওয়া, শরীরের ওজন আদর্শ ওজনে রাখা অর্থাৎ বি.এম.আই ২৫ এর মধ্যে রাখা, ডায়াবেটিস শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওষুধ-ইনসুলিন ও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলা। এই নিয়মগুলো মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীদের বড় ধরনের জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা কম বলে দাবি চিকিৎসকদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআরবি থেকে ১০০ স্বর্ণের বার উদ্ধার মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন
পরবর্তী নিবন্ধবায়েজিদে ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক