করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। বর্তমানে সারা দেশে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ঘিরে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এবার সাজানো হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
সাধারণত চারুকলার স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই কর্মযজ্ঞে শামিল হন প্রতি বছর। ১৯৭৮ সালে (১৩৮৪ সন) চট্টগ্রাম শহরে প্রথম নববর্ষের আয়োজন করা হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় আরও ছয় বছর পর। ১৯৮৪ সালে (১৩৯০ সন) চৈত্র মাসের শেষ দিনে বর্ষবিদায় উপলক্ষে ডিসি হিলের সামনে আয়োজন করা হয়েছিল পহেলা বৈশাখের প্রথম শোভাযাত্রা। সেই হিসেবে নগরে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা পদার্পণ করছে ৩৮ বছরে। তবে পহেলা বৈশাখের দিন নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন শুরু হয় ২০০৬ সাল (১৪১৩ সন) থেকে। উদ্যোক্তা ছিল চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চারুশিল্পী সম্মিলন।
এবার এপ্রিলের প্রথম দিন থেকেই চারুকলা ইনস্টিটটিউট প্রাঙ্গণে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। বাঁশ-কাঠ দিয়ে বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি, রঙের আলপনায় বর্ণিল মুখোশ-ফেস্টুনসহ শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
জাত ধর্ম বর্ণ ভুলে রাজনীতির মতবিরোধকে শিকেয় তুলে বাঙালিত্বের জয়গান গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে চট্টগ্রামবাসী। রুক্ষ বৈশাখের সাথে অন্ধকার দূর করার প্রত্যয়দৃপ্ত ঔজ্জ্বল্য মেলবন্ধন রচনা করবে। ডিসি হিল, সিআরবি, শিল্পকলা একাডেমি এবং অতি অবশ্যই চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। এক কথায় প্রাণের স্পর্শে জেগে উঠবে পুরো চট্টগ্রাম।
আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা সকাল ১০টায় বের হয়ে কাজির দেউড়ি ঘুরে আবার চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হবে। নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে গিয়ে দেখা গেল পহেলা বৈশাখ নিয়ে তাদের ব্যস্ততা।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ওবায়দুল কবির আজাদীকে জানান, পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে আর নতুন বছরকে বরণ করতে আমাদের সবার মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। গত দুই বছর করোনার থাবায় বাঙালির প্রাণের এ উৎসব হতে পারেনি। এবার তাই আমরা চাই উৎসবটা আরও বর্ণিল হোক। তিনি বলেন, এবার পাঁচশর মতো মুখোশ তৈরি করা হচ্ছে। শোভাযাত্রায় মুখোশ আর আবহমান গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকসাহিত্যকে উজ্জীবিত করতে মাছ, পেঁচা, পাখিসহ বিশেষ কিছু প্রাণীর প্রতিকৃতি তুলে ধরা হবে। পটচিত্রের কাজও চলছে সমানতালে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা শিক্ষকগণও হাত মিলিয়েছি। সাথে বৈশাখের অন্যান্য প্রস্তুতিও চলছে।
বর্ষবরণের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত ইনস্টিটিউটের প্রত্যেক শিক্ষার্থী। ঐতিহ্যের এ উৎসব উদযাপনের কাজ শিক্ষার্থীরা নিজেরা করলেও এই আয়োজন এখন কেবল চারুকলার কোনো অনুষ্ঠান নয়, পুরো জাতির। বর্ষবরণ নিয়ে এমনটাই বললেন ওবায়দুল কবির।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষবরণ উপলক্ষে এবার চারুকলা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ক্যাম্পাসে লোকজ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে।