প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে

| শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়কাটা থেমে নেই। অবিরাম চলছে পাহাড় কাটার যজ্ঞ। পাহাড় কেটে ছোট্ট পরিসরেই গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। অবৈধভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ঘর। এবিষয়ে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের লোকজনও কম দায়ী নয়।

 

গত ২৭ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘কখনো দিনে কখনো রাতে সমানে চলছে পাহাড় নিধন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মীরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় থেমে নেই পাহাড় কাটা। কোথাও প্রকাশ্য দিবালোকে, কোথাও রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। সরেজমিনে গেলেও দেখা মেলে আস্ত পাহাড় কেটে সাবাড় করার সচিত্র হাল।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের সামনেরখিল, ফরেস্ট অফিস, কয়লা ও ঘেরামারা এলাকার অনেক স্থানের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে কোনো ইটভাটা কিংবা মাটি বেচাবিক্রির সঙ্গে জড়িত কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোথাও প্রকাশ্য দিবালোকে, কোথাও রাতের আঁধারে দূর থেকে যেন কেউ টের না পায় সেভাবে তেরপাল দিয়ে আড়াল করে দিবারাত্রি চলছে এই পাহাড় কাটা।

আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এই মাটি নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়।

পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখছে না। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। ভূমিধস আমরা দেখেছি, দেখেছি মৃত্যুর সারি। আগামীতে আরো ঘটতে পারে মারাত্মক ভূমিধস।

কালের বিবর্তনে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজ সম্পদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৬ লাখ হেক্টর। দেশের মোট আয়তনের প্রায় শতকরা ১৭ দশমিক ৬২ ভাগ বনভূমি।

অবৈধভাবে নির্মিত ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ে প্রাণহানির মতো দুঃখজনক ঘটনা রোধ করতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় ভিজিলেন্স বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বনভূমির সমপ্রসারণ, বন ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, উদ্ভিদ শনাক্তকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ দূষণরোধ, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলা, রাবার উৎপাদন এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তৎপর থাকতে হবে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান করেছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে চলতি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ জন্য বনভূমি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ১৯২৭ সনের বন আইনের ৪ ও ৬ ধারায় প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত এমন সকল বনভূমিকে ২০ ধারায় সংরক্ষিত বন ঘোষণার প্রক্রিয়া গ্রহণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগদিনের পর দিন পাহাড় কেটে নগরীতেও বসতি নামের মৃত্যুপুরী গড়ে তোলা হলেও তা নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের যেন কোন মাথাব্যথাই নেই। অথচ পাহাড় কাটা রোধ ও বিপন্ন হওয়া থেকে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের আইনগত প্রতিষ্ঠান এটি। কিন্তু চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদফতর যেন ঘুমিয়েই থাকে সারাবছর। যতক্ষণ তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ না আসে কিংবা গণমাধ্যমে রিপোর্ট না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার ধূম চললেও তাদের তেমন পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।

যদিও এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি পরিবেশ অধিদফতরের। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার নেপথ্যে পরিবেশ অধিদফতরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকেই বড় করে দেখেন পরিবেশবিদরা। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাশালী লোক যদি পাহাড় কাটে তাহলে অধিদফতরের কতটুকুইবা করার মতো থাকে। তাই অধিদফতরের পদক্ষেপকে ছোট করে দেখাটা ঠিক হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে