প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ৩ মে, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

হজ্বের প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক

হজ্ব মুসলমানগণের জন্য ধর্মীয় সফর, মোবারক সফর। হজ্ব ও ওমরাহকারীগণ মহান আল্লাহপাকের আমন্ত্রিত মেহমান। ফরজ হিসেবে সব নিয়ম কানুন মেনে হজ্ব পালন করতে হবে। তদুপরি হজ্ব হচ্ছে একমাত্র ফরজ ইবাদত যেখানে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন। অতএব হজ্ব পালন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয় তার জন্য শারীরিক, মানসিক ও ধর্মীয় প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক।

হজ্বে শারীরিক কার্যক্রমটা বেশি। চলতি বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে জুনের ২৭ তারিখ হজ্ব। সবকিছু অনুকূল থাকলে ২৬ লাখ বা তার কম বেশি লোক হজ্ব করবেন। গরমকালে হজ্ব হবে বিধায় তাপমাত্রা আমাদের দেশ থেকে অনেক বেশি থাকার সম্ভাবনা। তথাকার আবহাওয়া শুষ্ক। অপরদিকে অনেক হজ্বযাত্রী এসি ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। কাজেই সর্দি, কাশি, জ্বর এর ঔষধ নিয়ে যাওয়া উত্তম হবে। সৌদি আরবের ঔষধের দোকানে আমাদের দেশের দোকানের মত এন্টিবায়োটিক বিক্রি করে না। সে দেশের সরকারী ডাক্তারের লিখিত অনুমোদন লাগে।

সৌদি আরবে শুষ্ক আবহাওয়া ক্রিম রাখতে হবে। সেখানেও যে কোন ঔষধের দোকানে ক্রিম পাওয়া যায়। অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ নিয়ে যাওয়া উত্তম হবে।

শত বছরের অধিক সময়ের ব্যবধানে করোনা মহামারীর কারণে গত পরপর ৩ বছর হজ্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। যেমন২০২০ সালে সৌদি আরবের অভ্যন্তর থেকে প্রবাসী ও সৌদিসহ ১ হাজার জনের স্থলে ৯৩৭ জন হজ্ব করেন সৌদি সরকারের অতিথি হয়ে। ২০২১ সালে তাও আবার সৌদি আরবের অভ্যন্তর থেকে প্রবাসী ও সৌদি মিলে ৬০ হাজার জনের স্থলে ৫৮ হাজার ৫ শত ১৫ জন হজ্ব করেন নিজেদের অর্থে। গত বছর তথা ২০২২ সালে বিদেশী ও সৌদি মিলে ১০ লাখ নরনারী হজ্ব করেন।

চলতি ২০২৩ সালে সাবেক নিয়মে পূর্ণাঙ্গভাবে হজ্বের আয়োজন চলছে। বাংলাদেশের কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। আপনি সরকারী নিয়ন্ত্রণে হজ্ব করলে বাংলাদেশ বিমানে সৌদি আরব পৌঁছবেন। উভয় পবিত্র স্থানে সরকারী নির্ধারিত ঘরে অবস্থান করবেন। খাওয়াদাওয়া নিজ ব্যবস্থাপনায়। কাফেলা এজেন্সীর মাধ্যমে হজ্বে গমন করলে বাংলাদেশ বিমানে চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে অথবা সৌদি আরবের দুই সংস্থার বিমানে সৌদি আরব গমন করবেন তাদের ব্যবস্থাপনায়।

একালে আমাদের অত্যধিক ব্যস্ততা কিন্তু তারপরও সময় নিয়ে হজ্ব পালনে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, যাতে হজ্ব সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সমাধান করা যায়। প্রয়োজন পড়ে হজ্বের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার। এক্ষেত্রে বলতে হয় হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদ প্রজেক্টরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে হজ্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। করোনা মহামারীর কারণে ৩ বছরের ব্যবধানে চলতি ২০২৩ সালে হজ্বযাত্রী নারীপুরুষদের কল্যাণে ৬ মে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে ৩/৪ ঘণ্টাব্যাপী হজ্ব প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। আর তা হবে চট্টগ্রাম মহানগরীর স্টেশন রোডস্থ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল সৈকতে। হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদ কোন কাফেলা এজেন্সী নয়। সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে খেদমত। এ প্রশিক্ষণে হজ্বযাত্রী নারীপুরুষগণকে অংশ নেয়া কল্যাণকর হবে।

হজ্বের জন্য আলাদা কেনাকাটা প্রয়োজন পড়ে। যেমনপুরুষের ক্ষেত্রে ৪ পিস এহরামের কাপড়। দুই ফিতার স্পঞ্জ স্যান্ডেল। মিনাআরাফাতমুজদালেফায় হজ্ব পালনে ৫ দিনের জন্য ব্যাগ ইত্যাদি। মহিলাগণের এহরামে বিশেষ পোশাক নেই। এহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে। এহরাম অবস্থায় কাপড়ের রং সাদা হওয়ার ব্যাপারে শর্ত না থাকলেও সাদা পড়া উত্তম। যেহেতু সাদার মধ্যে মন থেকে পবিত্রভাব এসে যায়। আমাদের দেশে সাধারণ ঘরে যেমন ফ্যান থাকে তেমনি পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনায় প্রতি ঘরের কক্ষে এসি থাকবে স্বাভাবিক। আমাদের দেশের হজ্বযাত্রীগণের অধিকাংশ এসিতে ঘুমাতে অভ্যস্ত নয়। অতএব সাবধান থাকতে হবে এসি ব্যবহার নিয়ে।

হজ্বের সফরে মোবাইল ব্যবহার নিয়ে সাবধান থাকা আবশ্যক। ২০/৩০ বছর আগেও মোবাইল ছিল না। মোবাইল আছে বলে প্রতিনিয়ত মোবাইল ব্যবহার করে ভিডিও পাঠানো অনুচিত। এ বিষয়ে এড়িয়ে চলা উচিত হবে। তাওয়াফ ও সায়ীতে পড়তে রওজাপাকে সালাম পেশ করতে ছোট ছোট দোয়া দরূদের বই রয়েছে। এসব বই গুলো কল্যাণকর। দোয়া পড়া শর্ত না হলেও এই ছোট পুস্তিকার মাধ্যমে সুন্দর গুছানো দোয়া পড়তে পারাটা যে উত্তম তা যে কোন মতালম্বী অস্বীকার করতে পারবে না। তাওয়াফ ও সায়ীতে এসব দোয়া পড়লে মন থেকে আবেগ এসে যায়। মহান আল্লাহপাকের কাছে চাওয়ার মধ্যে আবেগ থাকা আবশ্যক।

হজ্বের সফরে বড় ব্যাগের সাথে কাঁধে বহনযোগ্য ব্যাগ থাকা কল্যাণকর। আগেই উল্লেখ করেছি, গরম কালে হজ্ব অতএব ঠান্ডা পানীয় খাওয়াসহ ঠান্ডা যে কোন কিছু খাওয়া পরিহার করা চায়। তবে বেশি বেশি পানি পান করা উচিত। দুই হেরেমে যে জমজমের পানির কন্টেনার ব্যবস্থা আছে তার প্রায় সবই ফ্রিজের মত ঠান্ডা। শুধুমাত্র ‘ঘড়ঃ ঈড়ষফ’ লিখা কন্টেনার সাধারণ তাপমাত্রার জমজমের পানি থাকে।

হজ্বের সফরে এক অপরের প্রতি সহানুভূতি হওয়া অত্যাবশ্যক। মিনা, আরাফাত, মুজদালেফায় একে অপরের প্রতি রাগান্বিত হতে দেখা যায়। যা হজ্বের খুবই ক্ষতিকারক। ৪০ দিনের কম বেশি হজ্বের এ সফরে শতকরা ৭০ জনের অধিক হজ্বযাত্রীর ফরজ নামাজ কাযা হয়ে যায়। হয়ত সৌদি আরবে যাওয়াআসা কালিন বিমান বন্দরে বা ফ্লাইটে অথবা তথাকার মোয়াল্লেম বাসে। ৭০ বছরে ৭০ বার হজ্ব করলেও এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সমান হবে না। মহান আল্লাহপাকের কাছে ফরজ নামাজের গুরুত্ব অত্যধিক। চেষ্টা করবেন হালাল টাকা দিয়ে হজ্ব করতে। একালে শতকরা কয়জনের হালাল টাকায় হজ্ব হচ্ছে ভাবতে হবে।

হজ্বযাত্রীর এ পবিত্র সফরের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ৮১২ যিলহজ্ব ৫ দিনব্যাপী হজ্ব পালন। হজ্বের আগে বা পরে পবিত্র মদিনায় গমন করে রওজাপাকে সালাম পেশ করা। সে লক্ষে পবিত্র মদিনায় প্রায় ৮ দিন থাকা হয়। বাকী প্রায় ৩০ দিন বা কম বেশি সময় হজ্বযাত্রীগণ অবস্থান করবেন পবিত্র মক্কায়।

পবিত্র মক্কায় মসজিদুল হারম এবং পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীতে চেষ্টা করবেন এক ওয়াক্ত জামাতও যাতে বাদ না যায়। মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা উভয় পবিত্র নগরীর সীমারেখা নির্ধারিত আছে। চেষ্টা করা দরকার হজ্বযাত্রী যাতে এখানকার সম্মান রক্ষা করে চলেন।

পবিত্র মক্কায় সীমারেখা তথা হুদুদে (সীমানা) হারমের ভিতর যে কোন ভাল কাজ করলে একে লাখগুণ সওয়াব। তা পবিত্র মসজিদে নববীতে একে হাজার বা পঞ্চাশ হাজার। পবিত্র মক্কায় হুদুদে হারমের ভিতর নামাজ, রোজা, দান এক লাখগুণ সওয়াব। এখন প্রশ্ন আসে হুদুদে হারমের ভিতর যদি ৫/৭ জনে বা ১৫/২০ জনে পৃথকভাবে জামাত পড়ে এ সওয়াব ২৭ গুণ বৃদ্ধি পাবে স্বাভাবিক। অর্থাৎ ২৭ লাখ সওয়াব। ধর্মীয় বিজ্ঞজনের অনেকে একমত পোষণ করেন মসজিদুল হারমে নিজে নামাজ পড়লে লাখ সওয়াব। কিন্তু সম্মানিত ইমামকে নিয়ে ওয়াক্তে জামাত পড়লে ইহা ১ লাখের স্থলে ৫ শ লাখ সওয়াব পাবেন। আল্লাহ তাআলা গাফরুর রাহীম, রহমানুর রাহীম, মহানদাতা। অতএব চেষ্টা করা দরকার ৪০/৫০ দিনের পবিত্র সফরে কোন অবস্থাতেই যাতে জামাত বাদ না যায়। ৫ দিনব্যাপী হজ্বপালন এখনও কষ্টসাধ্য। কাজেই ধৈয্য, সবর নিয়ে কষ্ট স্বীকার করে হজ্বের পবিত্রতা রক্ষা করা আবশ্যক।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধনারী ও শিশু অধিকার প্রসঙ্গে