প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

৮ থেকে ১৩ যিলহজ্ব ৬ দিনব্যাপী হজ্ব কার্যক্রম। একালে হজ্ব পালিত হচ্ছে ৮ থেকে ১২ যিলহজ্ব ৫ দিনব্যাপী। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারীর পর থেকে সৌদি সরকার হজ্ব কার্যক্রমকে ঢেলে সাজায়। এতে পবিত্র মক্কা থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফাত এই দুই সেক্টর অনেকটা সহনীয়। কিন্তু আরাফাত থেকে মুজদালিফা, মুজদালিফা থেকে মিনা তথা হজ্বের পরবর্তী কার্যক্রমে সাহস, ধৈর্য, সবর অত্যাবশ্যক। সৌদি সরকার চাচ্ছে হজ্বকে শতভাগ শৃংখলায় আনতে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীরা শারীরিকভাবে এত সক্ষম নই। অপরদিকে, জুন মাস তথা গরমকালে পালিত হচ্ছে হজ্ব। তাদের শৃংখলা আমাদের শারীরিকভাবে প্রতিকূল অসহনীয় বলা যাবে।

করোনা মহামারীর পর থেকে হজ্ব কার্যক্রমকে বিভিন্ন কোম্পানীর মাধ্যমে সেবা দানের প্রক্রিয়া শুরু করে। অপরদিকে বাংলাদেশে অত্যধিক কাফেলা এজেন্সী থাকায় গত বছর ২ শত ৫০ জন হাজী নিয়ে এক এজেন্সী স্থলে আগামী জুনের হজ্বে এক হাজার হজ্বযাত্রী নিয়ে এক এজেন্সীর আওতায় আনা হয়েছে। অপরদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজ্বের কোটা ৩ ভাগের ১ ভাগ খালি যাচ্ছে। আগে হজ্বযাত্রীরা টাকা প্রদান করা এজেন্সীর মাধ্যমে মোয়াল্লেমের নিয়ন্ত্রণে হজ্ব করতেন। এখন ১০/১২ বা কম বেশি এজেন্সীর হাজীরা এক এজেন্সীর আওতায় এসে হজ্ব করবেন।

৮ যিলহজ্ব সকালে হজ্বযাত্রীগণ পবিত্র মক্কার হোটেল থেকে মিনায় গমন করা সুন্নত। কিন্তু ভিড় এড়ানো এবং যাতায়াত সুবিধার জন্য ৭ যিলহজ্ব দিবাগত রাত থেকে হজ্বযাত্রীগণ পবিত্র মক্কার হোটেল থেকে মিনার তাঁবুতে যাওয়ার ব্যবস্থা হবে। তাঁবুর ভিতর সিটের ব্যবস্থাপনা ও খাবারের মান নিয়ে রয়েছে আলোচনা সমালোচনা। ৯ যিলহজ্ব সকালে মিনা তাঁবু থেকে আরাফাতে যাওয়া সুন্নত। এখানেও ভিড় এড়ানো এবং যাতায়াত সুবিধার্থে ৮ যিলহজ্ব দিবাগত রাত মিনা তাঁবু থেকে আরাফাতের তাঁবুতে নেয়া শুরু করে। এই দুই সেক্টর তথা পবিত্র মক্কা থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফাতের তাঁবুতে পৌঁছা অনেকটা সহনীয় কষ্টসাধ্য। সারা দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয়। আরাফাতে অবস্থানকে হজ্ব বলা হয়। যা এক দীর্ঘ বর্ণনা। আরাফাত থেকে সূর্যাস্তের পরপর রওনা দিতে হবে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। আরাফাত প্রকান্ড ময়দান। আপনার তাঁবুর অবস্থাভেদে মুজদালিফার দূরত্ব ৪ থেকে ৬ কি.মি হতে পারে। পবিত্র মক্কা থেকে মিনার তাঁবু, মিনার তাঁবু থেকে আরাফাতের তাঁবুতে সরকারী বাসগুলো একাধিক ট্রিপ দিয়ে থাকে। যা সহনীয় যথাযথ। কিন্তু আরাফাত থেকে প্রথম ট্রিপেই মুজদালিফা আসতে পারাটা অতীব কল্যাণকর। যেহেতু ২য় ট্রিপ অনেকটা সময় মেইনন্টেন করা অনিশ্চিত বলা যাবে। মুজদালিফার অবস্থান আগের মত নেই। এমনিতে মুজদালিফার এরিয়াটি ছোট। মিনায় তাঁবু সংকুলানের বৃহত্তরস্বার্থে মুজদালিফার উত্তর পাশে অনেকটা ৩ ভাগের ১ ভাগ মিনায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে আরাফাত থেকে হজ্বযাত্রী নিয়ে আগত বাসগুলো মুজদালিফার পুলিশেরা অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে শৃংখলা রক্ষার্থে। এতে আরাফাত থেকে আসা বাসগুলোর চালক মুজদালিফায় হজ্বযাত্রী নামিয়ে দিতে প্রতিকূলতায় পড়ে। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে নিজ উদ্যোগে রাত্রি যাপন করতে হয়। নিজেরা নিজেরা মাগরিব এবং পরপর এশার নামাজ পড়া হয়। অতঃপর তাহাজ্জুদের পর ফরজের জামাত পড়া আবশ্যক। মুজদালিফা আর মিনা সংলগ্ন শত মিটার কম বেশি ব্যবধানে। ইহা আবরাহা বাদশাহ ধ্বংস হওয়া গজবের স্থান। মুজদালিফা থেকে মিনায় আসতে মোয়াল্লেমের বাস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বাস না পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক। ৮ যিলহজ্ব মিনায় পৌঁছে আপনার হজ্ব এজেন্সীর মাধ্যমে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্তে আসতে হবে আপনি কি মুজদালিফা থেকে আপনার মিনার তাঁবুতে যাবেন; নাকি সরাসরি জামারাতে গিয়ে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারবেন। বড় শয়তানকে একটি একটি করে ৭টি পাথর মারার পর আপনি কি সরাসরি পবিত্র মক্কার হোটেলে চলে যাবেন, নাকি মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন। জামরাত থেকে পবিত্র কাবার দূরত্ব ৫ কি.মি প্রায়। এ সময় গাড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। পায়ে হেঁটে যেতে হবে। পায়ে হেঁটে পবিত্র কাবার দিকে যাওয়াকালীন পবিত্র কাবার পূর্ব দিকে আল্লাহর রাসূল (.)’র জন্মস্থানের ওখানে আমরা মিসফালার দিকে তথা বাম দিকের হজ্বযাত্রীগণকে যেতে দেয়নি। শুধু মাত্র শৃংখলা রক্ষার জন্য মারওয়া পাহাড়ের উত্তরপার্শ্ব দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়। গত হজ্বে ১০ যিলহজ্ব হজ্বযাত্রীরা মিনায় বারে বারে ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়। বড় ধরনের কোন অঘটন না হয়েও প্রায় ১ হাজার ৫ শত হজ্বযাত্রী মারা যায়। তার মূল কারণ গরম ও ব্যারিকেড বলে আমার বিশ্বাস। মিনায় গত হজ্বে হজ্বযাত্রীর চাপ কমানোর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীরা ঘনঘন ব্যারিকেড দিয়েছিল। যা আমরা দুর্বল হজ্বযাত্রীগণের জন্য সহ্য করা খুবই কঠিন। আপনি বয়স্কজন হতে পারেন, হয়ত বা আপনার মুরব্বি থাকতে পারে, হয়ত বা আপনার সাথে মহিলা থাকতে পারে। অবস্থাভেদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

উত্তরদক্ষিণ কিছুটা কোনাকোনি ৬ থেকে ৭ কি.মি দৈর্ঘ্য মিনা। যা দুই পাহাড়ের মধ্যখানে। অনেকটা ছোটখাটো উপত্যকা বলা যায়। মিনার উত্তর সীমান্তে প্রায় ২ শ মিটারের মধ্যে পরপর তিন জামারাত। একদম উত্তরপাশে বড় জামারাত এর প্রায় মাত্র ২ শত মিটারের ব্যবধানে মিনার সীমানা শেষ। অপরদিকে দক্ষিণে মিনা এরিয়ার ভিতর হজ্বযাত্রীগণের তাঁবুর সংকুলান হচ্ছে না বিধায় পূর্ব দিকে একাধিক পাহাড়ের উপর এবং মুজদালিফার তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ে মিনাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ৫ দিনব্যাপী হজ্ব কার্যক্রমে ৪ দিন মিনা কেন্দ্রিক। বিগত ক বছর থেকে মিনায় বহুতল দালান নির্মাণের আলোচনার কথা শুনা যাচ্ছে। ধর্মীয় বিজ্ঞজন একমত হলে কাজ শুরু হয়ে যাবে। জামারাত থেকে প্রায় ১ কি.মি দক্ষিণে খুবরী খালেদ তথা বাদশাহ খালেদ ব্রীজের মধ্যখানে ১ কি.মি এর মধ্যে ৫/৬ তলা বিশিষ্ট ৮/১০ টি বিলাসবহুল দালান নির্মাণ করা হয়েছে। এখানেও হজ্বযাত্রীরা অবস্থান নিবেন স্বাভাবিক।

১০,১১,১২ এ তিন দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্র মক্কায় গিয়ে হজ্বের তৃতীয় ফরজ পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতে হবে। অতঃপর হজ্বের ওয়াজিব সাফামারওয়া সায়ী করা। আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে আসা।

১১ যিলহজ্ব দুপুরের পর প্রথমে ছোট অতঃপর মেজ তারপর বড় শয়তানের প্রতি পরপর ৭টি করে পাথর মেরে মিনার তাঁবুতে ফিরে আসতে হবে। ১২ যিলহজ্ব দুপুরের পর অনুরূপভাবে ৩ শয়তানের প্রতি ২১ টি পাথর মারার পর আপনি কি তাঁবুতে ফিরে আসবেন নাকি পবিত্র মক্কার হোটেলে চলে যাবেন। যেহেতু আপনার সাথে লাগেজ আছে কিনা, আপনার তাঁবুতে মহিলা আছে কিনা এবং আপনি জামারাত থেকে ৫ কি.মি হেঁটে পবিত্র মক্কা হোটেলে যাওয়া সক্ষম কিনা। যেহেতু ১২ যিলহজ্ব বিকেলে হজ্বযাত্রীগণকে মিনা তাঁবু থেকে পবিত্র মক্কা হোটেলে যেতে বাস দেয়া হয়।

অর্থাৎ হজ্বযাত্রীকে বুঝতে হবে শারীরিক সক্ষমতা কি রকম, সাথে কোন বয়স্ক যাত্রী ও মহিলা আছে কিনা, জামারাত থেকে মিনা তাঁবু কত দূরত্বে, সবকিছু বিবেচনা করে ১০, ১১, ১২ যিলহজ্ব এই তিন দিন হজ্ব কার্যক্রমে হজ্বযাত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বস্তুতঃ ৫ দিনব্যাপী হজ্ব কার্যক্রম একালেও কষ্টসাধ্য। তার উপর জুনে হজ্ব, আবহাওয়া গরম। অপরদিকে হজ্বযাত্রীর অবশ্যই মনোবল থাকতে হবে। যেহেতু হজ্বপালনে যাবতীয় কষ্ট ধর্মের অঙ্গ। নামাজ, রোজা, যাকাত, অতি কষ্টের এবাদত নয়। হজ্ব কষ্টের এবাদত। হজ্বযাত্রীকে এও মাথায় রাখতে হবে হজ্বযাত্রীগণ আল্লাহ তাআলার দাওয়াতী মেহমান। অতএব মহান আল্লাহ পাক হজ্বপালন সহজ করে দিবেন এ দৃঢ় মনোবল রাখতে হবে হজ্বযাত্রীকে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারুণ্যের জয়গানে ঐকতান
পরবর্তী নিবন্ধমোহামেডানের হয়ে ঢাকা লিগে খেলতে নামছেন মোস্তাফিজ