ভবিষ্যতে সমৃদ্ধি অর্জনের মানসে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে দূর পরবাসে পাড়ি জমায় প্রবাসীরা। দেশে তেমন পরিশ্রম না করলেও বিদেশে এসে সব করে তারা। হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে।
তারা প্রবাসী মশিউল, জাহিদুল, রাতুল আর রফিকুল নামে ভিন্ন হলেও সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে সামান্য ভুল করে কষ্টার্জিত অর্থের কূলকিনারা হারিয়ে সর্বহারা হয়ে যায়। এই সব দুর্দশা লাঘবের জন্যে বিভিন্ন সময়ে সচেতন প্রবাসীরা দূতাবাস সহ সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে যোগাযোগ করে-“আমরা দেশে গিয়ে কি করলে ভালো হবে? একটা সুপরামর্শ চাই”।
ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ কোরিয়াতে অবস্থানরত অনাবাসী প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্হ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর যৌথ উদ্যোগে গত ১০ জানুয়ারি রবিবার স্হানীয় সময় বিকাল ৬টায় দূরশিক্ষণে উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি(শ্রম) ও দূতালয় প্রধান মকিমা বেগমের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
পরে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
তিনি বলেন, “বিদেশে কর্মরত আমাদের রেমিটেন্সযোদ্ধারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১৮.২ বিলিয়ন রেমিটেন্স পাঠিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্দেশ্য হলো অনাবাসী প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা। যখন তারা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবে এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি কীভাবে ব্যবসায়ের সূচনা, কোম্পানির নিবন্ধনকরণ, কৌশলগত ব্যবসায়ের পরিচালনা, শিল্পের জন্য জায়গা নির্বাচন, কীভাবে লাইসেন্স পাওয়া যাবে, সাপ্লাই চেইন, অ্যাকাউন্টিং, ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যবসার প্রক্রিয়া পরিচালনা কীভাবে করা যায় তা সহ আরও বিভিন্ন খুঁটিনাটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্হান ও পরিষেবাদি লিমিটেড (বোয়েসেল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল হাসান বাদল।
তিনি বলেন, “সারাবিশ্বে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের ভালো চাহিদা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা দক্ষ কর্মী পাঠাতে চাই।”
তিনি বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন।
তিনি রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম বলে জানান।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ কোরিয়াস্হ সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্টদূত আবিদা ইসলাম।
সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসীদের অবদান অপরিসীম। দক্ষতা এবং ট্রেনিং শ্রমিকদের আপগ্রেড করে এবং তাদের যুগোপযোগী করে তোলে যা তাদের আরও উপার্জনের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে সহায়তা করে। বর্তমানে কোরিয়াতে প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “উদ্যোক্তা উন্নয়নের ওপর প্রশিক্ষণটি দেশে গিয়ে কীভাবে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারা যাবে সেই বিষয়ে তাদের পরিচালিত করবে এবং প্রবাসীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস ও অর্জন করবে।”
জানা যায়, সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদী এই দুই ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত কোর্সের ক্লাস উদ্বোধনের দিন শুরু হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী কোর্স আরম্ভ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি।
দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এই কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে ইপিএস কর্মী, কোরিয়াতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সহ অন্যান্য পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
তাদের পক্ষ থেকে ধারণকৃত বক্তব্য রাখেন ইপিএস কর্মী অসীম বড়ুয়া, পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. রবিউল কবির, মুরসালিন শেখ, নাজমুল হোসাইন।
এ ধরনের উদ্যোক্তা কোর্স চালু করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তারা দূতাবাস ও ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে ধন্যবাদ জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনকেএ মবিন এফসিএ, মো. জয়নুল আবেদিন, মোফাজ্জল হোসাইন, শাহীনুর আলম সিএসসি, সামুয়েল মুর্মু, মিসপে সরেন, দ্বীন ইসলাম, রনজিত কুমার, শেখ নিজামুল হক, নাজমুন নাহার, কাজী শাহ আলম, জিলানী জুয়েল, এস এম মনির হোসাইন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি দূতাবাসের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।