প্রবাসী আয় নিয়ে আমাদের অর্থনীতিবিদরা আশাবাদী। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসের কম সময়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রেমিট্যান্স। এটি এক অর্থবছরের হিসেবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স আসার চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে ২৯ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হুন্ডির ব্যবসা চাঙ্গা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডি কমে এসেছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন ডলারের দাম বেশি মিলছে। যে কারণে এখন কেউ ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাতে চান না। অন্যদিকে, আড়াই শতাংশ প্রণোদনা আগেও ছিল, এখনও আছে। তাই পাচার ও হুন্ডি কমায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মে মাসের প্রথম ১১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এতে চলতি অর্থবছরের ১১ মে পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন)। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন)। এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসের কম সময়ে আসা রেমিট্যান্স এক অর্থবছরের হিসাবেও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন)। এর পরের দুই অর্থবছরে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে আসে রেমিট্যান্স। আর গত অর্থবছরে আসে ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
খবরে আরো বলা হয়, মূলত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেশ গতি নিয়ে বাড়ছে রেমিট্যান্স। তথ্যানুযায়ী, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়ছে। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ এবং ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। চলতি বছরেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারিতে এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ এবং এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
বর্তমানে জনশক্তি রফতানি কম হলেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির আরও কিছু কারণ আছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা আনতে ওইসব দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশে বিকাশ বা নগদের মতো প্রতিষ্ঠানের ওয়ালেট ব্যবহার করে রেমিট্যান্স আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে বিদেশে থাকা কর্মীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও ওয়ালেটের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারছেন দেশে। এসব কারণে হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, আর হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমার কারণেও রেমিট্যান্স বেড়েছে। বিদেশি কর্মীরা এখন বৈধ চ্যানেলে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স হাউসগুলোর অনিয়মও বন্ধ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘জনশক্তি রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে সবার আগে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে। এরপর মাইগ্রেশন ডিপ্লমেসি বাড়ানোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে হবে। একই সঙ্গে আমরা এখনও ইউরোপের শ্রমবাজারে পিছিয়ে আছি, ওই বড় বাজারটি ধরার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ইউরোপের দেশগুলোতে এখনও অবৈধ পথে বা ভিন্ন কোনো দেশে আগে গিয়ে তার পর ইতালি, স্পেন বা ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে যাচ্ছে। এভাবে না গিয়ে বৈধপথে ইউরোপের বাজারে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। অল্প শ্রমে বেশি অর্থ উপার্জন করা যাবে– এমন কর্মী পাঠাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের দেশগুলোতে অনেক চিকিৎসকের চাহিদা রয়েছে, নার্সের চাহিদা রয়েছে। এর বাইরেও কারিগরিভাবে দক্ষ কর্মীরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ধরনের কর্মী বেশি বেশি যাতে পাঠানো যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।’