চট্টগ্রাম অন্তঃপ্রাণ মানুষ মাত্রই জানেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক বড় অবদান রয়েছে। আর সেই অবদানের মূল কারণ এ অঞ্চলের প্রতি তাঁর একটা মায়াবী টান রয়েছে। তাই তিনি একে একে উদ্বোধন করে চলেছেন চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতার কথা জানান দিয়েছেন অতি সম্প্রতি। এবার মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রাম জেলার ১৭ টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের ২৪টি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ১৪ নভেম্বর সকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং–এর মাধ্যমে এ প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় গণভবনের সঙ্গে ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারাদেশে ১০১ টি প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ভিডিও কনফারেন্সিং–এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চট্টগ্রামের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রকল্পগুলো হচ্ছে : পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, ‘বে–টার্মিনাল’ শীর্ষক প্রকল্প পিপিপি প্রকল্প, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদস্থ সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য ৬৮৪ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ (বিভিন্ন সংখ্যক তলাবিশিষ্ট ১৫ ভবন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪ টি ভবনে ১৬০ টি ফ্ল্যাট ও ৬৪ টি ডরমিটরি, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, এশিয়ান ইউনিভর্ার্সিটি ফর উইমেন–এর বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক নির্মাণ, সিরাজউদ্দোলা রোড হতে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত জানে আলম দোভাষ সড়ক নির্মাণ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ারা–ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম–ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল–এর জন্য গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ও কেজিডিসিএল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক (এন–০১) এর ২৫২ তম কিলোমিটারে মুরালী খালের ওপর ১২১ মিটার দীর্ঘ ভেল্লাপাড়া সেতু নির্মাণ, সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন, নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ এবং মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নে আমান উল্লাহ ভূঁইয়া কমিউনিটি ক্লিনিক (ওয়ার্ড নং–১) নির্মাণ কাজ।
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা এবং বাণিজ্য নগরী হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের উন্নয়ন করা তাঁর একটি দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন। চট্টগ্রাম উন্নত হওয়া মানে পুরো বাংলাদেশের উন্নয়ন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যবসা–বাণিজ্য, আমদানি–রপ্তানিসহ সব ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের অবদান আছে।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম চমৎকার একটি এলাকা। এই এলাকার সৌন্দর্য–পরিবেশ রক্ষা করে যেন সামগ্রিক উন্নয়ন হয়, সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি আছে। শিল্প–কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে, যেন কোনোভাবেই আমাদের নদীগুলো দূষিত না হয়, এলাকা দূষিত না হয়।’
‘চট্টগ্রামকে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে গেলে তার প্রাণশক্তি হবে চট্টগ্রাম। এটা আমাদের বাণিজ্য নগরী। এক সময় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে, কিন্তু ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এসব প্রধান কার্যালয় ঢাকা নিয়ে এসেছে। যার কারণে চট্টগ্রাম অনেকটা অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন আবার সরকার গঠন করে তখন থেকে চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়।’
আসলে চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন সব কিছুর অবদান একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাঁর বিকল্প নেই। যাঁর সনিষ্ঠ আন্তরিকতা, দৃঢ়তা ও দূরদর্শী পরিকল্পনায় স্বপ্নযুগে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম। তাই বিশেষজ্ঞরা তাঁকে ‘উন্নয়ন আর অগ্রগতির বিস্ময়মানবী’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, ‘তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব, লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও দৃঢ়তা আজ বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে’। এ বাংলার দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানুষ মনে রাখবে তাঁর কাজের জন্য। ব্যাপক উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামবাসীকে কৃতার্থ করেছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা চট্টগ্রামবাসী আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।