জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ না দেখে হতাশ হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভাষণে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের দাবি জানিয়েছেন। সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের আমলের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি এই দাবি জানান। বিএনপি নেতা এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন ইউনূস সরকারের সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, নির্বাচনের নিয়ে আলোচনা দাবি করলেন।
আগের দিন রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস তার সরকারের যে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সে বিষয়ে ফখরুল বলেন, এখনও আমি ধোঁয়াশায়, যে অবস্থাটা সেটা আমার পরিষ্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, তিনি একটা রোডম্যাপ দেবেন, সেই রোডম্যাপ আমরা কিন্তু ‘ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি’, এটা আমরা কিন্তু উনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি। রিফর্মসের কথা বলেছেন, সেই রিফর্মগুলো কোন কোন বিষয় সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, সেগুলো এই অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না।
নির্বাচন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে যাবেন খুব দ্রুত যাবে এবং তিনি রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন ছাড়া তো সম্ভব নয়, নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। সেজন্য ধৈর্য ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’, ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে অভিযোগ করে সেগুলো প্রত্যাহারেরও দাবি জানান বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার মামলা চলে গেছে, উঠানো হয়েছে, আরেকজন উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে। সাজা ছিল সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে। আমাদের একজন মানুষও নাই–বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এখানে আমরা যারা বসে আছি যাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা নাই। এই মামলাগুলো অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিদেরকে দ্রুত অপসারণের দাবি করে ফখরুল বলেন, আমরা তাদের মুখও দেখতে চাই না।
এদিকে ভারতের বাঁধের পানি ছাড়ার বিষয়েও কথা বলেন ফখরুল। আন্তর্জাতিক আইন থাকা সত্ত্বেও ভারতের বাঁধ খুলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ডুবিয়ে দেওয়া একটা ক্রিমিনাল অফেন্স বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব।