প্রথমে ৭২টি কন্টেনার, পরে জাহাজটি উদ্ধার হবে

ভাসানচরে ডুবে যাওয়া পানগাঁও এক্সপ্রেস নতুন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি, চলছে কার্যক্রম

হাসান আকবর | সোমবার , ২১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আশা ছেড়ে দেওয়া জাহাজটি অবশেষে আশা জাগাতে শুরু করেছে। বঙ্গোপসাগরের হাতিয়ার ভাসানচরের কাছে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিমজ্জিত হওয়া কন্টেনারবাহী জাহাজ এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সাথে কন্টেনারে বোঝাই ৫০ কোটি টাকা দামের স্টিল কয়েলসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে জাহাজটিতে থাকা ৭২টি কন্টেনার উদ্ধারের পর মূল জাহাজটিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হবে।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার পরিবহন কাজে নিয়োজিত জাহাজ এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস গত ৬ জুলাই ভাসানচরের কাছে সাগরে নিমজ্জিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। এ সময় বাতাসের তোড় এবং প্রচণ্ড স্রোতে জাহাজটি থেকে পণ্যবোঝাই ৩টি কন্টেনার সাগরে ছিটকে পড়ে। এই কন্টেনারগুলোর হদিশ মিলেনি। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার সময় ৭২ বক্স কন্টেনার ছিল। এগুলোও এলোমেলো হয়ে যায়। অধিকাংশ কন্টেনারে স্টিল কয়েল এবং কয়েকটিতে মোটর পার্টস রয়েছে। সবগুলো পণ্য স্টিলের হওয়ায় এগুলো নষ্ট হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সাগরের নোনা পানিতে তলিয়ে থাকা স্টিল কয়েল ঠিকভাবে কাজে লাগানো যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস জাহাজটির মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছিল সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সি নামের একটি কোম্পানি। নিমজ্জিত হওয়ার পরই বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিকে চিঠি দেয়। পরে দফায় দফায় তাগাদাও দেওয়া হয়।

বন্দর সূত্র জানায়, ভাসানচরের যে স্থানটিতে জাহাজটি প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে সেটি বিপজ্জনক এলাকা। তীব্র স্রোত এবং বাতাসের তোড়ে ওই এলাকায় ইতোপূর্বে একাধিক লাইটারেজ জাহাজ নিমজ্জিত হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তাগাদার পর সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সি ডুবে যাওয়া জাহাজ কিংবা কন্টেনারগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া এবং উত্তাল সাগরে জাহাজটি উদ্ধার দুরুহ হয়ে ওঠে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় একটি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজটি উদ্ধারে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে জাহাজ এবং কন্টেনার উদ্ধারের ব্যাপারে চুক্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটে। ফলে পানগাঁও এক্সপ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ দেখা দেয়।

আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে জাহাজ কিংবা কন্টেনার উদ্ধারের ব্যাপারে হতাশা দেখা দেয়। এক মাসের বেশি সময় পার হলেও জাহাজটি উদ্ধারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় অনেকে আশা ছেড়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

অবশেষে জাহাজটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরেছে সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিজ লিমিটেড। পিএস শিপিং নামের একটি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে এ ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আলোকে পিএস শিপিং জাহাজটি উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে করে ওই জাহাজ এবং ৭২ কন্টেনার পণ্য উদ্ধার হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেডের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজ দুর্ঘটনার পরপরই আমরা উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নিই। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে ওখানে উদ্ধারকাজ পরিচালনার মতো অবস্থা ছিল না। কোনো উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারেনি। এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেসের মতো ভারী একটি জাহাজকে উদ্ধার করার মতো ভারী ক্রেনের অপ্রতুলতা উদ্ধারকাজ বিলম্বিত করেছে।

সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুদ্দিন জুয়েল আজাদীকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ে। একই কারণে উদ্ধারকাজও বিলম্বিত হয়েছে। আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারকের প্রতিনিধিকে বিষয়গুলো অবহিত করে আসছি। অবশেষে পিএস শিপিং নামের একটি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজটিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। এই কোম্পানি ওই এলাকায় আগেও নিমজ্জিত একাধিক লাইটারেজ জাহাজ উদ্ধার করেছে। অভিজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হলেও বৈরী আবহাওয়ায় তারা সময়মতো উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারেনি।

তিনি বলেন, অবশেষে পিএস শিপিং উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটির কন্টেনারগুলো উদ্ধার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।

পিএস শিপিংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম মাসুদ বলেন, পুরো কাজটিকে দুই ভাগে ভাগ করে আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাব। শুরুতে আমরা ৬টি ক্যাবল জাহাজটির এপাশ থেকে ওপাশে পাস করে জাহাজটিকে স্থির করব। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে কন্টেনারগুলো বার্জে নিয়ে চট্টগ্রাম আনব। ইতোমধ্যে পাঁচটি ক্যাবল পাস করেছি। আরো একটি ক্যাবল পাস করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে চিকন ক্যাবল পাস করে ওই ক্যাবলের মাধ্যমে মোটা ক্যাবল জাহাজটির এপাশ ওপাশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকে। পুরো দিনে মাত্র ২/৩ ঘণ্টা কাজ করা যায়। ভাটা ছাড়া ওখানে কাজ করা যায় না। তবুও আমরা ধৈর্য ধরে একেকটি ক্যাবল পাস করছি। ৬টি ক্যাবল পাস হওয়ার পরই জাহাজটিকে স্থির করতে সক্ষম হব। এরপর কন্টেনারগুলো জাহাজ থেকে তুলে বার্জে নিয়ে আসব। ওই বার্জ আনা হবে চট্টগ্রামে। পরে চট্টগ্রাম থেকে কন্টেনারগুলো অপর কোনো জাহাজে করে পানগাঁও পাঠানো হবে।

কন্টেনার সরিয়ে নেওয়ার পর মূল জাহাজটিকে উদ্ধার করা হবে উল্লেখ করে সি গ্লোরির পক্ষ থেকে বলা হয়, সব আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। টেকনিক্যালি যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে। জাহাজটি উদ্ধার এখন সময়ের ব্যাপার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থানীয় দোকানির মারধরে রক্তাক্ত চবি শিক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধডিসি-এসপির নম্বর ক্লোন করে টাকা দাবি, থানায় জিডি