করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এক বছর দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আগামী ২৩ মে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা ছিল। দফায় দফায় পিছিয়ে সেই তারিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষমুখী করতে বিকল্প হিসেবে যে সব এলাকায় সংক্রমণ কম প্রথমে সেই গ্রামের স্কুলগুলো খোলার চিন্তার কথা জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সীমিত আকারে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা-ভাবনার কথাও জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনলাইনে গণস্বাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘করোনা বিপর্যস্ত শিক্ষা: কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক সংলাপে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এমন ভাবনার কথাই বলেছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর প্রমুখ। সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক। খবর বাংলানিউজের।
সংলাপে শিক্ষাবিদরা মতামত দেন, আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনা সহজেই যাবে না। তাই যেসব এলাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নেই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে বলে আমাদের পরিকল্পনা ছিল। আর অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা একদিন করে আসবে। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই পদ্ধতি নিয়ে এগুতে পারবো। তিনি বলেন, এখন দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোশাতে আমাদের সব অবকাঠামো ব্যবহার করছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না। যাদের আনতে পারছি না তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
সচিব বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশের জন্য একটা পলিসি নিয়েছি। এখন সময় এসেছে গ্রামভিত্তিক বা এলাকাভিত্তিক পলিসি নিতে হবে। ঢাকা শহরে একজন শিক্ষার্থীর যত এঙেস আছে চর এলাকার একজন শিক্ষার্থীর সেটা নেই। কিন্তু তারও একটা সুবিধা রয়েছে, সেখানে করোনার ততখানি প্রকোপ নেই। সেই বিষয় ও বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্কের মধ্যে আনতে পারি।
নতুন শিক্ষাক্রম পিছিয়ে গেলো এক বছর : এদিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হচ্ছে না। এর পরিবর্তে ২০২২ সালে প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করা হবে। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনলাইনে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের কাজ শুরু হবে। এরপর ২০২৩ সালে এই দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই তুলে দেবে সরকার। আর প্রাথমিকে ২০২২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হবে এবং পরের বছর এই শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া হবে। চলতি বছরে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে বই পাবে বলে এর আগে জানিয়েছিল দুই মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে বলা হয়, আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি; মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পাওয়ার কথা ছিল। আর ২০২৩ সালে অষ্টম শ্রেণি ও ২০২৪ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়ার কথা। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের বই দেওয়ার কথা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।