‘প্রাচীন যুগের কোনো মহিলা কবির পদ বা রচনা এখনো আবিস্কৃত হয়নি। মধ্যযুগে প্রথম মহিলা কবি হিসেবে চন্ডীদাসের সাধন সঙ্গিনী রজকিনী রামী বা রামতারাকে দেখা যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। … রামীর পরবর্তীতে ইন্দ্রমুখী, মাধুরী, গোপী, রসময়ী দেবী নাম্নী বৈষ্ণব নারী কবির ভণিতা যুক্তপদ পাওয়া যায়। ষোড়শ শতাব্দীর কবি মাধবী দাসী … ষোড়শ শতকের আরেক কবি হলেন চন্দ্রাবতী। তিনি বিখ্যাত মনসামঙ্গল রচয়িতা বংশীদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা। খনা একজন গুণবতী রমণী ছিলেন। তাঁর জ্যোতিষ–শাস্ত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞ মন্তব্যগুলো বাংলার গৃহ প্রবাদে পরিণত হয়েছে। তিনি মুসলমান শাসনের প্রথম যুগে এই প্রদেশে বসবাস করতেন। অষ্টাদশ শতকে প্রথম মুসলিম মহিলা কবি রহিমুন্নেসাকে দেখা যায়। তাঁর পূর্বে মুসলিম লেখিকার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।’ প্রথম মুসলিম মহিলা কবি শ্রীমতী রহিমুন্নেচা’র জন্ম–সন নিয়ে মতভিন্নতা আছে। এই মত–ভিন্নতা দেখা দেয়, ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে রহিমুন্নেচা’র অনুলিখিত একটি পুঁথি আবিষ্কারের পর। এ–সময় ড. এনামুল হক এক শিক্ষকের কাছে একটি পান্ডুলিপির সন্ধান পান। পান্ডুলিপিটা মধ্যযুগীয় কবি আলাওলের পদ্মাবতী ভাবা হলেও পাঠানুসন্ধানের পর জানা যায়, এটি রহিমুন্নেচা’র অনুলিখিত একটি পুঁথি। এখানে রহিমুন্নেচা’র জন্মসনের উল্লেখ ছিল না। ড. এনামুল হক আবিষ্কৃত পুঁথিখানা বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে আসেন, রহিমুন্নেচা ১৭৯০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। ড. এনামুল হক ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একমাত্র মুসলিম মহিলা কবি’ শিরোনামে বাংলা একাডেমী পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখে সবার দৃষ্টি–আকর্ষণ করেন। উইকিপিডিয়া লিখছে, রহিমুন্নেচা ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাঁর পিতামহের চট্টগ্রামে আগমনকে বিবেচনায় নিলে উইকিপিডিয়ার এ তথ্য গৃহীত হবে না। সমাধিস্থলে প্রস্তরফলকে লেখা আছে বাংলা সাহিত্যের রহিমুন্নেচা ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন।
রহিমুন্নেচা উল্লেখিত পুঁথিতে বংশ পরিচয়ে উল্লেখ করেছেন, তাঁর পিতৃপুরুষ মক্কার কোরাইশ বংশের উত্তরসূরি। কারাবালা যুদ্ধের পর তাঁর দাদা স–পরিবারে বাগদাদ থেকে বিহারের মুংগে আসেন। রহিমুন্নেচা’র পিতামহ মুঙ্গেরে তখন সর্বস্ব হারিয়ে সপরিবারে চট্টগ্রামে পালিয়ে এসে জঙ্গলশাহ নামধারণ করেন। চট্টগ্রামে এসে জঙ্গলশাহ পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অনেককে মুরীদ করেন। চট্টগ্রামের শুলকবহরে জঙ্গিশাহ’র মাজার এখনও আছে।
রহিমুন্নেচার পিতা আবদুল কাদির চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার শুলক বহরে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানে রহিমুন্নেচা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে শুলকবহরে। এটা তিনি তাঁর অনুলিখিত পুঁথিতে বিস্তারিত লিখেছেন– ‘নাম গোত্র বিরচিয়া করিমু বর্ণন।/কর্ণগতে শুন মন দিয়া কবিগণ।।/জংলী শাহা নাম করি গুণে অনুপাম।/আহালে কোরেশ বংশে উৎপত্তি তাহান।।/ যখনে ইমাম–সঙ্গে দাসীর নন্দন।/ ধর্ম ছাড়ি সজ্জ হৈল করিবারে রণ।।/ হোচেনের সেনাপতি মিলি কত লোক।/ঈশ্বর স্মরিয়া মনে জানি কর্ম ভোগ।।/ কত কত বহিত্র যে পূর্ণ সাজ করি।/ বাগদাদে আসিলা ইমাম আজ্ঞা ধরি।।/ তথা হস্তে আর কত মুঙ্গেরে আসিল। সে মুলুক নৃপ সঙ্গে বহুযুদ্ধ হৈল।।/ অগ্রগামী হইয়া ইংরাজে যুদ্ধ দিল।/ দৈবদশা ফিরিঙ্গীর বিজয় হইল।।/ মুখ্য মুখ্য সবের বহুল রত্ন ধন।/ লুটিয়া করিল খয় যত পাপিগণ।।/অনেক লাঘবে নিজ জম্মভূমি ছাড়ি।/ চট্টগ্রামে আসিয়া রহিলা বাস করি।।/ পির হই শিষ্য কৈলা কত কত গ্রাম।/ প্রকাশ হইল তান যশ কৃতি নাম।।’
ড. এনামুল হক আবিষ্কৃত পুঁথির শেষাংশে রহিমুন্নেচার আত্মজৈবনিক বর্ণনায় বংশ পরিচয় পাওয়া যাবে। এখানে কবি লিখেছেন-‘পীর হই রহে চট্টগ্রামেতে আসিআ।/ সেক কোরসের বংশে জনম হইআ।/ বহু সিস্ব করিলেক একাতে রহিআ।/ তাহান মুরব্বীগণ দুষ্কিত হইআ।/মক্কা দেশ হন্তে এথা রহিল আসিয়া।।’
রহিমুন্নেচা শুধু নিজের নামের আগে শুধু ‘শ্রীমতী’ লিখেননি, মায়ের নামের আগেও ‘শ্রীমতী’ লিখেছেন। শ্রীমতী রহিমুন্নেচা’র মায়ের নাম ছিল ‘শ্রীমতী’ আলিমন্নিচা। কবি রহিমুন্নেচা আত্মজৈবনিক বর্ণনায় নিজের ও মায়ের আত্মপরিচয়ে আরও লিখেছেন– ‘স্বামী আড্ডা শিরে পালি লিখিও ভারতী।/রহিমুন্নেচা নাম জান আদ্যে শ্রীমতি।।/…প্রভু ভক্তা সতীত্ববর্তী জননী অনুপাম।/ শ্রীমতী আলিমন্নিচা জান তার নাম।।/ স্ত্রী–জাতি হিন মুক্তি নাই সুবেবার।/ নবীর চরণ বিনে নাহক নিস্তার।।’
রহিমুন্নেচা তিন ভাইয়ের একবোন ছিলেন। তিনি ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের হাটাজারি উপজেলার মেখল গ্রামের প্রাচীন অভিজাত জমিদার নন্দন আহমদ আলীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। আহমদ আলী রহিমুন্নেচার কোনো এক ভাইয়ের মুরীদ ছিলেন। তিনি রস–রাজ ও ধার্মিক ছিলেন। রহিমুন্নেচা’র শ্বশুরালয়ও ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম অভিজাত পরিবার। শিক্ষা–দীক্ষা–সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে এ পরিবারেও ঐতিহ্য রয়েছে। রহিমুন্নেচা দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন। চট্টগ্রামের মুসলিমলীগের নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কবির চৌধুরীর মাতা ফাতেমা খাতুন চৌধুরাণী ছিলেন রহিমুন্নেচা’র পৌত্রী। ফাতেমা খাতুন চৌধুরাণী কবি রহিমুন্নেচাকে দেখেছেন। তাঁর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানোর স্মৃতিচারণ করেছেন চট্টল গবেষক আবদুল হক চৌধুরীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তিনি কবির স্মৃতিফলকে প্রদত্ত জন্ম ও মৃত্যু সনদকে সঠিক বলেও মত প্রকাশ করেছেন।
রহিমুন্নেচা’র শৈশবে পিতৃবিয়োগ ঘটে। মা শ্রীমতী আলিমুন্নিচা’র তত্ত্বাবধানে তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যান। এসময় তাঁকে তাঁর ছোটভাই বিশিষ্ট আলেম আবদুল গাফফারও তাঁকে এ–কাজে সহায়তা করেন। ভাইয়ের কাছে তিনি নানান বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়াও মায়ের তত্ত্বাবধানে তিনি পটিয়ার পন্ডিত আবুল হোসেনের কাছে বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেন।
রহিমুন্নেচা স্বামী আহমদ আলী’র প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লেখনীতে প্রকাশ করেছেন। যদিও এমন ভালোবাসা প্রতিটি বাঙালী নারীর মধ্যে দেখা যায়। তিনি আত্মজৈবনিক পর্বে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন– ‘গুণীদের পদ, করিএ ভকত,/কর মোরে আশীর্বাদ/ স্বামীর সঙ্গতি, থাকিতে পিরীতি,/ না হৌক যে বিসংবাদ।।/ প্রভু করতারে, মুই অভাগীরে/ করুনা রহে সতত/ আন ভাব মতি, নৌক আন পত, /না করৌক লজ্জাগত।।’ তিনি এমনই স্বামী ভক্ত ছিলেন যে, তিনি লিখেছেন-‘ মোর প্রতি রস রাজ। রসিক সমাজ, ব্রত ধর্ম কাজ, উপেক্ষা না করে চিত।’
রহিমুন্নেচা’র সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে বিবাহোত্তর সময়ে। এক্ষেত্রে বেশি কাজ করেছে স্বামীর উৎসাহ। রহিমুন্নেচা স্বামীর একান্ত আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের অনুলিখন করেন। ‘শুন গুণি গণ, হই এক মন, লেখিকার নিবেদন। অক্ষর পড়িলে, টুটাপদ হৈলে, শুদরিঅ সর্বজন। পদ এই রাষ্ট, হেন মহা কষ্ট, পুঁথি সতী পদ্মাবতী। আলাওল মণি, বুদ্ধি বলে গুণী, বিরচিল এ ভারতী। পদের উকতি, বুঝি কি শকতি, মুই হীন তিরী জাতি। স্বামীর আদেশ, মানিয়া বিশেষ, সাহস করিলু গাঁথি।’ এ–সব পদ অনুলিখিত পদ্মাবতী কাব্যের শেষভাগে কবি আত্মপরিচয় হিসেবে উল্লেখ করেন। রহিমুন্নেচা’র অনুলিখিত আলাওলের পদ্মাবতী কাব্য ড. এনামুল হক সর্বাগ্রে জন–সমুখে প্রকাশ করেন। পরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কবির আরেকটি আত্মপরিচয়ের সন্ধান লাভ করেন। এটি দৌলত কাজী বাহরাম খাঁ’র লেখা লাইলী–মজনু কাব্যের অনুলেখন শেষে উল্লেখ আছে। এখানে রহিমুন্নেচা ভাইদের কথা লিখেছেন-‘মোর তিন ভ্রাতা আর মাত্রি গুণবতী/ যৎকিঞ্চিত শাস্ত্রপাঠ সিখাইল নিতি।।/ মোর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দুই নাম শুন তার/ আবদুল জব্বার আর আবদুস ছত্তার।।/ মোহর কনিষ্ঠ ভ্রাতা এই নাম তান।/ আবদুল গফার করি অবোধ অংগান।’
মধ্যযুগের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার মধ্যে বড় হয়ে উঠলেও রহিমুন্নেচা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাব্যে ‘পূর্ব–জন্ম’, ‘ঈশ্বর বন্দনা’ প্রসঙ্গের উল্লেখ এরই সাক্ষ্য বহন করে। তিনি লিখেছেন– ‘পূর্ব জন্মে কৈলু পাপ, সে দোষে ফলিল তাপ,/আশাভ্রষ্ট হৈলমি অনাথ।’ রহিমুন্নেচা ধার্মিক ছিলেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তিনি কোরান ও কায়দা আমপারা লিখেছিলেন, যা তাঁর বিদূষী জননী আলিমুন্নিচা নিয়মিত পাঠ করতেন।
রহিমুন্নেচা’র মৌলিক রচনার মধ্যে আছে, ‘আত্ম–বিবরণী’, ‘দোরদানা বিলাপ’ ও ‘ভ্রাতৃ বিলাপ’। ‘আত্ম–বিবরণী’–তে ৪৮টি শ্লোক আছে। ‘দোরদানা–বিলাপ’–এ আছে ২০টি শ্লোক। ‘দোরদানা–বিলাপ’ মূলত শোকগাঁথা। তাঁর পদসমূহকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ দুটি হলো– ‘লঘু ত্রিপদী’ ও ‘খর্ব ছন্দ’। মধ্যযুগের রেওয়া–অনুযায়ী কবি বারমাসিয়া রীতিতে রচিত ‘দোরদানা–বিলাপ’ কন্যা দোরদানা খাতুনের মৃত্যুর পর লিখেছিলেন। ‘দোরদানা–বিলাপ’–এর কোনো নাম ছিল না। ড. এনামুল হক এ নামকরণ করেন। কবির কন্যা দোরদানা খাতুন স্বামীর হাতে খুন হয়েছিলেন। একথা ‘দোরদানা–বিলাপ’–এর এক স্থানে আছে-‘নবী বংশ এজিদার যুদ্ধেতে পড়িল।/ মোর কন্যা তোর হস্তে শহীদ হইল।।/ আপনার তিরী বলি না কৈলা বিচার।/ কি উত্তর দিবি যাই গোচরে আল্লার।।/ স্বর্গবাসী হুর সব হরষিত হৈয়া ।/কন্যা মোর নিল আসি আগু বাড়াইয়া।।/ পিতায়ে কান্দন করে আর্তনাদ ছাড়ি।/ কোথা লুকাইল মোর দোরদানা সুন্দরী।।’ কবি রহিমুন্নেসা এখানে নিজের জীবনের গল্পের মাধ্যমে মধ্যযুগের প্রাচীন বাংলার অন্তঃপুরের নারীর সুখ–দুঃখ–কষ্টের অমূল্য গাঁথা ব্যক্ত করে ‘দোরদানা–বিলাপ’–কে সর্বজনীন রূপ দেন। এাঁই তাঁর কাব্য প্রতিভার বিশেষত্ব।
‘ভ্রাতৃ বিলাপ’–এর মধ্যেও এমন একটা সর্বজনীন দৃশ্যকল্প পাওয়া যায়, যদিও এটি তিনি রচনা করেছিলেন, ছোট ভাই বিশিষ্ট আলেম আবদুল গাফফারের মৃত্যুর পর। এ–ভাইটি তাঁর শিক্ষা–দীক্ষায় যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। এখানে কবি লিখেছেন– ‘মিত্রের প্রাণের প্রাণ, ভ্রাতৃ মোর রূপবান, নাম তার আবদুল গফুর/ আঘ্রানের পক্ষ দিন, শুক্রবার শুভ চিন, ভ্রাতৃ মোর গেল স্বর্গপুর।।/ ফেলি মাও ভাই বোন ভ্রাতা মোর সুখ মন, / স্বর্গপুরে গেলা মনোরঙ্গ। ভুরূযুগ অতি টান, নয়ান কটাক্ষ সান, স্বর্গের হুর মনোভঙ্গ।।/ ভাবে মগ্ন হই মতি, প্রভু হন্তে মাগি গতি, ভ্রাতৃ মোর লৈ গেল বরিয়া।/ পুষল মাসেতে দুখ, কহিতে বিদরে বুক, তোমা শোকে ফাটি যায় হিয়া।।/ পুরিলে নিবন্ধ আয়ু, বন্ধন না হয় বায়ু, সেই ছিদ্রে যমে দিল কোল।/ দিবানিশি অভিপ্রায়, কান্দ এ অভাগী মায়, না শুনিয়া তোমা সুধা বোল।।’
রহিমুন্নেচা’র রচনা শৈলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তিনি মধ্যযুগের শেষভাগের কবি হলেও প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ভাষাশৈলী ও বানান–রীতির প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, যাকিনা তাঁর সমকালের অন্য কবি–লেখকদের মধ্যে কম দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাঁর ভাষাশৈলী ও বানান–রীতির সঙ্গে চর্যাপদের মিল আছে। তাঁর লিখন শৈলীতে প্রাচীন পুঁথি–সাহিত্যের প্রভাব আছে। রহিমুন্নেচা’র কাব্যের রচনাশৈলীতে আধুনিক শৈলী ও রীতি পরিলক্ষিত না হলেও ভাবনার মধ্যে আধুনিকতার ছাপ ছিল। এর মাধ্যমে তাঁর কাব্যে সর্বজনীনতারও প্রকাশ ঘটে। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্বামী আহমদ আলী মৃত্যুবরণ করলে অধিক শোকে কাতর রহিমুন্নেচা’র সাহিত্যচর্চার সমাপ্তি ঘটে।
কবি রহিমুন্নেচা’র মৃত্যু নিয়েও মতভিন্নতা আছে। চট্টল গবেষক আবদুলহক চৌধুরী উল্লেখ করেছেন রহিমুন্নেচা ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধিস্থলে লেখা আছে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ। কবির একমাত্র পুত্র শেখ সিদ্দিক আহমদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় হাটহাজারি উপজেলার জাফরাবাদের নাম পরবর্তীকালে রহিমপুর করা হয়েছিল।
(তথ্যসূত্র : ড. আহমেদ আবদুল্লাহ: বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি রহিমুন্নেসা; ভোরের কাগজ প্রতিবেদক: রহিমুন্নিস সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র; শাহানা ইসলাম : মধ্যযুগের মুসলিম মহিলা কবি রহিমুন্নিসা; মো. জোবায়েদ আলী জুয়েল: প্রথম মুসলমান গদ্য লেখিকা; মো.আলাউদ্দীন: হাটাহাজারীর রত্ন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কবি রহিমুন্নিসার জীবনী; গোলাম কুদ্দুছ : ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন)
লেখক : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার