তুমুল বৃষ্টিতেও স্থাপিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর পতেঙ্গা পয়েন্টে শুধুমাত্র দুইটি গার্ডার স্থাপন করা হয়। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা টানেলের মুখ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোট সাড়ে তিন হাজার গার্ডার স্থাপন করা হবে। প্রতিদিন ছয়টি থেকে আটটি গার্ডার স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও প্রথম দিনেই বৃষ্টির কারণে কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে ব্যাপক গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। লালখান বাজার থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হলেও কার্যতঃ সুফল মিলবে বহদ্দারহাট থেকে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে ওঠার পর বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করা যাবে। তবে পথিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে র্যাম্প এবং লুপ থাকবে। যেখানে ইচ্ছেমাফিক ওঠানামা করা যাবে। বিশাল এই প্রকল্পটিকে চারটি পৃথকভাবে ভাগ করে কাজ শুরু করা হয়। শুরুতে পতেঙ্গা সী বিচ এলাকার টানেলের কাছ থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত পাইলিং এবং পিলার তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে কাজ হবে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সর্বশেষ এবং চতুর্থ পর্যায়ের কাজ হবে বারিক বিল্ডিং থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজ সম্পন্ন করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সিডিএ। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে অর্থাৎ পতেঙ্গা সী বিচ এলাকা থেকে ফ্লাইওভারের গার্ডার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আট কিলোমিটার ফ্লাইওভারে গার্ডার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়–বৃষ্টির মধ্যেও পতেঙ্গা অংশে প্রতিটি ১৪৭ ফুট লম্বা ও ১২০ টন ওজনের দুইটি গার্ডার স্থাপন করতে সক্ষম হন সংশ্লিষ্টরা। রাত ১২ টায় শুরু হয়ে কাজ চলে ভোর চারটা পর্যন্ত।
এই সময় সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫৪ ফুট প্রস্থের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের আট কিলোমিটার অংশে মোট ২০০টি পিলার রয়েছে। এরমধ্যে ১২৫টি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। একটি পিলার থেকে অপর পিলারের দূরত্ব (স্প্যান) ৩৫ মিটার থেকে ৪৫ মিটার। প্রতিটি স্প্যানে আটটি করে গার্ডার স্থাপন করা হবে। পুরো প্রকল্পে সাড়ে তিন হাজার গার্ডার ব্যবহৃত হবে। নিচে তৈরিকৃত এসব গার্ডার ক্রেনের সাহায্যে পিলারের উপর স্থাপন করা হবে। প্রতিদিন ছয়টি থেকে আটটি পর্যন্ত গার্ডার স্থাপন করা সম্ভব হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের গার্ডার স্থাপনের কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়ে বলেন, গতরাতে (বৃহস্পতিবার) আমরা বৃষ্টির মধ্যে মাত্র দুইটি গার্ডার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আজও (গতকাল শুক্রবার) গার্ডার স্থাপন হবে। এ কাজ প্রতিদিনই চলবে। পতেঙ্গা অংশ থেকে গার্ডার বসিয়ে সল্টগোলা ক্রসিংয়ের দিকে পৌঁছতে পৌঁছতে বাদবাকি পিলারের কাজও শেষ হয়ে যাবে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।