বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের জেতাটা এখন এক রকম অঘটন। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতির জন্য জিম্বাবুয়েকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। যেখানে লক্ষ্য ছিল নিজেদের অনুশীলনটা সারা। কিন্তু সে অনুশীলনটা যেন সারা হচ্ছে না মোটেও। বিশেষ করে ব্যাটারদের। দলের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা যেন রানই করতে পারছেন না। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তানজিদ তামিম এবার ফিরেছেন ১৮ রান করে। লিটন, শান্ত কেউই পারেননি অনুশীলনের সুযোগটি কাজে লাগাতে। তারপরও বাংলাদেশ জিতেছে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে। তবে সেখানে সবচাইতে বড় ভূমিকা বোলারদের। তাসকিন, সাইফুদ্দিন, শরীফুল, রিশাদ, মেহেদী হাসানরা ঠিকই তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন ব্যাটারদের ভূমিকাটা সবচাইতে বেশি। কারণ টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন হরহামেশাই দুইশর বেশি রান হয়। আবার সে রান টপকেও যায়। আর সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাজটা হচ্ছে না ঠিকমত। তারপরও স্বস্তি যে টানা দুই ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৬ উইকেটে। অথচ জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৩৯ রানের টার্গেট টপকাতে কিনা ঘাম ঝরল বাংলাদেশের। কি তরুণ আর কি অভিজ্ঞ সবাই যেন একই পথে হাঁটলেন। টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংটা যেন ভুলেই গেছেন তারা। আগের ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতলেও এই ম্যাচ জিততে ৪ উইকেট হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তাওহিদ হৃদয় যা একটু ধারাবাহিক। আগের ম্যাচে ১৮ বলে করেছিলেন ৩৩ রান। আর এ ম্যাচে করলেন রান। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশ পেল টানা দ্বিতীয় জয়। ৯ বল হাতে রেখে পাওয়া এই জয়ে সিরিজে ২–০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে নিশ্চয়ই সিরিজ নিশ্চিত করতে চাইবে স্বাগতিকরা।
টসে জিতে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণে বেশি সময় নেননি তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই এই পেসার ফেরান মারুমানিকে। আরেক ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে ফেরান সাইফউদ্দিন। তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। এরপর রিশাদ হোসেনের জোড়া আঘাত। তার শিকার সিকান্দার রাজা এবং ক্লাইভ মাদান্দি। দুজনের কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। মাদান্দি রানের খাতাও খুলতে পারেনি। ১০ রান পর ক্রেইগ এভিনকে ফেরান মেহেদী হাসান। ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তখন একেবারে খাদের কিনারায়। আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হওয়ার শংকা তখন জিম্বাবুয়ের সামনে। তখনই হাল ধরেন ব্রায়ান বানেট এবং অভিষিক্ত জনাথন ক্যাম্পবেল। দুজন ৪৩ বলে যোগ করেন ৭৩ রান। জিম্বাবুয়ে গ্রেট আলিস্টার ক্যাম্পবেলের সন্তান জনাথন ক্যাম্পবেল ৫ রানের জন্য অভিষেক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি মিস করেন। ২৪ বলে ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪৫ রান করে শরীফুলের বলে সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন জনাথন। পরের ওভারে লুক জংবিকেও ফেরান তাসকিন। তবে একাপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ব্রায়ান বানেট। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রান করে। তার ২৯ বলের ইনিংসে ২টি চার এবং ৩টি ছক্কার মার ছিল। আর জিম্বাবুয়ে জমা করতে পারে ১৩৮ রান। আগের ম্যাচে করতে পেরেছিল জিম্বাবুয়ে ১২৪ রান। বাংলাদেশের সফল বোলার তাসকিন এবং রিশাদ নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
১৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেশ সতর্কতার সাথেই শুরু করেছিলেন লিটন দাশ এবং তানজিদ হাসান তামিম। কিন্তু আগের ম্যাচে একাধিকবার জীবন পেয়ে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম এবার পারলনে না ইনিংস বড় করতে। ফিরেছেন ১৯ বলে ১৮ রান করে। আর এর ফলে ভাঙ্গে দুজনের ৪১ রানের জুটি। এই ম্যাচেও অধিনায়ক শান্ত বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না। আগের ম্যাচে ২১ রান করলেও গতকাল ফিরেছেন ১৫ বলে ১৬ রান। সেই জংবির বলেই ফিরলেন টাইগার অধিনায়ক। লিটন দাশ এই ম্যাচেও পারলেন না পরিস্থিতির দাবি মেঠাতে। আগের ম্যাচে ১ রান করা লিটন এই ম্যাচে খেলেছেন ২৫ বলে ২৩ রান। যা টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে বেমানান। ৬২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বলা যায় বাংলাদেশ একরকম চাপে। কারণ তখন ১০ ওভার খেলা হয়ে গেছে। জাকির আলি অনিকও হেঁটেছেন লিটন–শান্তদের পথে। ১২ বলে ১৩ রান করেছেন এই তরুণ। অথচ তাকে কিনা ভাবা হচ্ছে বিশ্বকাপে লিটন দাশের বিকল্প হিসেবে। যেভাবে তিনি বোল্ড হলেন সেটা যে কারো কাছেই দৃষ্টিকটূ লাগবে। তরুণ তাওহিদ হৃদয়ের সাথে মাহমুদউল্লাহর ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জয় নিশ্চিত হয় বাংলদেশের। হৃদয় অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ৩৭ রানে। আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৬ বলে ২৬ রান। ম্যাচের সেরা হয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মনজুর আলম মঞ্জু।