চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে চালু হয়েছে বহুল প্রত্যাশার রেডিওথেরাপি। গতকাল সকাল থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রেডিওথেরাপি প্রদান শুরু হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্যান্সারের রোগীদের ঢাকায় গিয়ে রেডিওথেরাপি নিতে হতো। এজন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা অনেক। অবশেষে এমন অপেক্ষার দিন শেষ হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি প্রদান করা যাবে।
মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার হাসপাতালের চিফ এডভাইজার, প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে গতকাল রেডিওথেরাপি প্রদান শুরু হয়েছে। হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহানসহ অন্যরা রেডিওথেরাপি প্রদানের কার্যক্রম মনিটরিং করেন। প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ৫০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দেয়া সম্ভব হবে। রোগীর চাপ বাড়লে নতুন করে মেশিন স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে দ্বিতীয় রেডিওথেরাপি মেশিনও স্থাপন করা হবে বলে জানালেন হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী রেডিওথেরাপি মেশিন উদ্বোধন করে বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল আমাদের সকলের প্রতিষ্ঠান। এটি চট্টগ্রামবাসীর প্রতিষ্ঠান। এই হাসপাতাল নিয়ে আমরা এখন গর্ব করি। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ চিকিৎসাসেবার জন্য এখানে ছুটে আসে। এটি এখন মানুষের ভালোবাসা ও আস্থার ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। করোনাকালে আপনারা যে সেবা দিয়েছেন তা চট্টগ্রামবাসী আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। এই হাসপাতালের উন্নয়নে সবসময় সাথে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এখানে এই সুযোগ তৈরি করে দেয়ায় চট্টগ্রামের মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে মা ও শিশু হাসপাতাল অনন্য ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন।
সিটি মেয়র বলেন, আমরা কে মন্ত্রী, কে এমপি, কে মেয়র, সেটি বড় কথা নয়। বড় কথা হলো আমরা মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। এমপি মন্ত্রী নন এমন বহু মানুষকেই যুগের পর যুগ মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আসছেন। কারণ তারা মানুষের পাশে ছিলেন, মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমরা প্রত্যেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করলে একদিন জাতি আমাদেরও মনে রাখবে।
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এবং ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান এম এ মালেক। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় আমরা ক্যান্সার হাসপাতাল চালু করতে পেরেছি। আজ থেকে শুরু হলো ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা। এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো চট্টগ্রামের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। রেডিওথেরাপির অভাবে চট্টগ্রামের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা অনেক কষ্ট করেছেন। তাদের অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে আমরা কাজ করার চেষ্টা করেছি। বহু মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা যেন চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা।
এম এ মালেক বলেন, আমরা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ক্যান্সার মেশিনটি আমদানি করেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকের এই ঋণ শোধ করতে হবে। আমরা অনুদান সংগ্রহ করছি। অনুদানের মাধ্যমে এ ঋণ পরিশোধ করতে পারলে স্বল্প ব্যয়ে চট্টগ্রামের মানুষকে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে পারব।
চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, আমরা কারো দানকে ছোট করে দেখব না। কেউ চাইলে ১ টাকাও আমাদের দিতে পারেন। ৫ টাকার দানও সানন্দে গ্রহণ করব। আমরা চাই এখানে সকল মানুষ অংশ নিক। সকলের সহায়তায় মানুষের জন্য এই হাসপাতাল গড়ে উঠুক।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান রানা, জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ, জয়েন্ট ট্রেজারার লায়ন এস এম কুতুব উদ্দীন, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, মেম্বার এ এস এম জাফর, কাউন্সিলর জাফরুল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
এ সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাসেম, নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান, দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি (ডোনার) সৈয়দ আজিজ নাজিমউদ্দীন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, ডোনার মেম্বার মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, মেম্বার ডা. ফজল করিম বাবুল, চমাশিহা মেডিকেল কলেজের উপদেষ্টা প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল প্রফেসর অসীম কুমার বড়ুয়া, উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, উপপরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম, উপপরিচালক (আইসিএইচ) ডা. মো. আবু সৈয়দ চৌধুরী, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে নিয়ে ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
এর আগে মেয়র সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সড়কটি উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের রাস্তাটির বাকি কাজও আমরা করে দেব। মা ও শিশু হাসপাতালের যে কোনো প্রয়োজনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাশে থাকবে।