উচ্চতর গণিতে পাশ না করায় সহপাঠীদের সঙ্গে শলা-পরামর্শে প্রশ্ন উঠেছিল কিভাবে বাসা ম্যানেজ করবে, জবাবে মেয়েটি বলেছিল, ‘দেখিস কিভাবে করি’। এর খানিক পরই ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকার বাসায় ফিরে ১০ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী। তখনও তার গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম। গত মঙ্গলবার বিকালে লাফিয়ে পড়ার সময় নিচ থেকে অনেকে দেখে নিষেধ করলেও ওই কিশোরী তা শোনেনি বলে জানান স্থানীয়রা। এই দৃশ্য দেখে অনেকে কেঁদেও ফেলেন। সূত্র- বিডিনিউজ।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই স্কুলের এক শিক্ষককে ইঙ্গিত করে বলছেন, তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে তিনি ফেল করিয়ে দেন। উঠে এসেছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও ফলাফল নিয়ে চাপ থাকার কথা। নবম শ্রেণির ‘সি’ সেকশনে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিজের ভাগ্নি পড়তেন জানিয়ে হাসিবুজ্জামান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির অনেকগুলো মেয়ে উচ্চতর গণিতে ফেল করে। তার ভাগ্নি এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনে তারও ধারণা হয় যে, প্রাইভেট না পড়ার ফলে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসিবুজ্জামান বলেন, তার ভাগ্নি বলেছে, মেয়েটি প্রথম সাময়িকীতে হায়ার ম্যাথে ফেল করেছিল। দ্বিতীয় সাময়িকীতেও সে ফেল করেছে। তার বাবা-মাকে স্কুল থেকে ডাকার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। শিক্ষকরা ফেল করা ছাত্রীদের বাবা-মাকে ডেকে অপমান করছেন, এরকম কথাও ছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা অনেকেই আতঙ্কিত হয়। ক্লাসে এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক শলা-পরামর্শও করে। এরকম আলোচনার সময় মঙ্গলবার মেয়েটিকে তার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছিল, এখন কিভাবে বাসা ম্যানেজ করবি? মেয়েটি তখন বলেছিল, দেখিস কিভাবে করি। এর কিছুক্ষণ পরেই সোশাল ওয়েবে মেয়েটির মৃত্যু সংবাদ আসে।
মেয়ের মৃত্যুর জন্য ওই শিক্ষককে দায়ী করছেন ওই ছাত্রীর মাও। তবে এ বিষয়ে কোনো মামলা বা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে জানান তিনি। তারা শুনেছেন, ফলাফল খারাপ হওয়ায় উচ্চতর গণিতের শিক্ষক অনেক রাগারাগি করেছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের ডাকার কথাও বলা হয়। অনেক অভিভাবকের সঙ্গে নাকি কর্কশ ভাষায় কথা বলা হয়েছে। এসব নিয়েই হয়তো মেয়েটা চাপে পড়েছিল। তবে এসব অভিযোগ মোটেও সত্য নয় দাবি করে শ্রেণি শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, অনেক গণমাধ্যমে অভিভাবকদের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে ও ক্লাসে প্রথম হতো। কিন্তু বিষয়টি এরকম নয়, ও মধ্যম মানের ফল করে আসছিল। তবে এবার প্রথম সাময়িকী পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞানে ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় আবারও উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞানের সঙ্গে সাধারণ গণিতেও ফেল করে।
একজন শিক্ষকের প্রতি অভিভাবকদের যে অভিযোগ সে প্রসঙ্গে শ্রেণি শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলছেন, এরকম কিছু হলে তো মেয়েটি অন্য বিষয়গুলোতে ফেল করত না। সে আরও দুটো বিষয়েও ফেল করেছে। অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের রূঢ় আচরণের অভিযোগও নাকচ করে দেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা তাদের ডেকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলি। নবম শ্রেণির এতগুলো ছাত্রী কেন খারাপ ফলাফল করল এ নিয়ে তারা সতর্ক ছিলেন। তবে কারও সঙ্গে রূঢ় আচরণের প্রশ্নই ওঠে না।
স্কুলের আরও কয়েকজন নারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন মেয়েটি যেন ভালো ফলাফল করে সেজন্য তার পরিবার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছিল। তাকে বকাঝকা করা হতো বলেও তারা শুনেছেন। ছাত্রীদের একজন বলেন, মেয়েটির বাবা অনেক কঠোর অভিভাবক। ভালো ফলাফলের জন্য চাপ দিতেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির মা বলেন, প্রথম সাময়িকী পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের পর ওর বাবা শুধু বলেছিলেন, এবার ফেল করলে বাড়িতে কোনো ইন্টারনেট লাইন রাখা হবে না। তিনি জানান, গৃহকর্তা ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে পড়ে মাদ্রাসায়। এক ছেলে মেয়েকে নিয়ে তারা ছিলেন সুখী পরিবার।