সর্বজনীন পেনশনের পঞ্চম স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–কর্মচারীদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্ময় পরিষদের সঙ্গে এক সভা শেষে এই পেনশন স্কিম থেকে শিক্ষকদের নাম বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের বলেন, পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–কর্মচারীদের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়, স্ব–শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কীমসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, গত ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্য নিয়েই স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পেনশন কর্তৃপক্ষ। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, ১ জুলাই ২০২৪ বা তার পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রীও তার বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি বলেছেন। বর্তমানে দেশে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মত প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) এর আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, পেনশন পান না।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতার বাইরে থাকায় সরকার সব শ্রেণি–পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। কিন্তু সার্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক–কর্মচারীরা। আগের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু হয়েছে। তাতে যুক্ত হলে অবসরপরবর্তী আর্থিক সুবিধা কমে যাওয়ার শঙ্কায় আন্দোলনে নেমেছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দেবেন, তাদের প্রত্যয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক–কর্মচারীরা এ নিয়ে আন্দোলনে নামলে বিষয়টি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে এরপরেও শিক্ষকদের একটি অংশ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমে কিছু সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যদিও সেই ভাবনার বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি। এরই মধ্যে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন চরমে উঠলে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। গত ২৯ জুলাই ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তিতে আপত্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে সেদিন আলোচনার বিষয়ে কেউই মুখ খোলেননি।