ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের দেশে এখনো প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেশি। আমার মনে হয় আমাদের আস্তে আস্তে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হচ্ছে। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এর সাথে সাথে আমরা যদি নিজেদের সম্পৃক্ত করতে না পারি তবে আমাদের অর্জন কখনো দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের লেকভিউ হলে আলোচনা সভা ও সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মূল্য সংযোজন কর যেটাকে আমরা ভ্যাট বলি, এই ভ্যাট অর্থনীতিতে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। যে যাই বলুক অর্থনৈতিকভাবে আমরা যে অর্জনটা করেছি এটা ম্যাজিকের মতো। আমরা গ্রাম শহর হবে বলছি। আপনারা দেখছেন গ্রামের কিভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। এই যে ভ্যাট আদায়ের জন্য একসময় হয়রানির অভিযোগ আসত, আমি যখন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ছিলাম তখন ব্যবসায়ীরা আমাকে বলতেন, ভ্যাট কর্তারা নানা ধরনের সুযোগ–সুবিধা চাইতেন। কিন্তু এখন সেটি পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের ১০০টা ইকোনমিক জোন হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে মীরসরাই ইকোনমিক জোন। সেখানে কী পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে চিন্তা করে দেখুন। আপনারা বলতে পারেন জিনিসপত্রের দাম কেন বেশি হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে, করোনার দুই বছর ব্যবসা–বাণিজ্য স্তব্ধ ছিল। যথাযথ কৃষি ফলন হয়নি। তার ওপর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। একটা দেশে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে অনেক ক্রাইসিস হয়। আবার এসব ক্রাইসিস থেকে আমরা শিখি। দেশ চালাতে রাজস্ব আয়ের কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাটের মাধ্যমে দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আসে। ক্রেতারা ভ্যাট দেন। বিক্রেতারা তা সংগ্রহ করেন। মাস শেষে সরকারের কোষাগারে জমা দেন। ভ্যাট কিন্তু ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে দিতে হয় না। তারা ক্রেতার দেওয়া ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা দেন। এটি বুঝতে হবে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের বাজেট ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন তা ৬ লাখ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। দেশের উন্নয়নেই এসব টাকা ব্যয় হয়েছে।
বিএনপি প্রসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিএনপির হাতে দেশ নিরাপদ নয়।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কেবল দুর্নীতি–লুটপাট করেছে। দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। এখন তারা নানা কথা বলছে। আন্দোলন করছে। ক্ষমতায় যেতে চাইছে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? তারেক জিয়া তো লন্ডনে পলাতক। এছাড়া খালেদা জিয়া জেলে। তাদের তো নেতৃত্বই নেই। তারা কীভাবে দেশ চালাবে?
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, এনবিআর প্রান্তিক পর্যায়ে ভ্যাটের আওতা ছড়িয়ে দিতে চায়। এজন্য নতুন কমিশনারেট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে উপজেলা–ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানও ভ্যাটের আওতায় আসবে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব। এতে ফাঁকি দেওয়া অপরাধ।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সেখানেও ভ্যাট কর্মকর্তাদের নজর দিতে হবে। উন্নয়ন চাইলে ভ্যাট ও ট্যাঙ দিতে হবে। ভ্যাট দেয় ক্রেতারা। তবে যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় তাদের উপরই কেবল বারবার সবকিছু চাপিয়ে দিলে হবে না।
কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কর আপীলাত অঞ্চলের কমিশনার সফিনা জাহান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের অধীন পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সেরা ভ্যাটদাতার পুরস্কার ও সম্মাননা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে কালুরঘাটের ইস্টার্ন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, সানমারের এসকরপ এ্যাপারেলস এবং আগ্রাবাদের যমুনা ট্রেডার্স, কঙবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্ট এবং বান্দরবানের ভেনাস রিসোর্ট। সেরা ভ্যাটদাতা হিসেবে পুরস্কার ও সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন সায়মন বীচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান রুহেল।