প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। গত রোববার এ চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিতে প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন। তবে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
মর্যাদা পেলে চসিকের ইতিহাসে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া চতুর্থ মেয়র হবেন রেজাউল করিম চৌধুরী। ১৯৮৯ সালে পৌর কর্পোরেশন থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হওয়া সংস্থাটিতে এ পর্যন্ত ছয়জন (রেজাউল করিমসহ) মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে আগে তিনজন মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন।
এদিকে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা পাওয়ার বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। মেয়র মনে করেন, নীতি বিচ্যুত না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার উপর আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থার মর্যাদা রাখবেন বলেও জানান তিনি। কোন কারণে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন এমন প্রশ্নে রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ষাট দশক থেকে রাজনীতি করছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। দীর্ঘ এ সময়ে কোনো অবস্থাতেই নীতিবিচ্যুৎ হইনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে নীতির উপর থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। রাজনৈতিক জীবনে এমন কোনো কাজ করিনি যেটার জন্য জনগণ থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। এসব কারণে নেত্রী আমার উপর আস্থা রেখেছেন। সে জন্য আমি নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। নেত্রীর আস্থার মর্যাদা দিয়ে নগরবাসীর জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার উপর যে আস্থা রেখেছেন সে আস্থা এবং বিশ্বাসের যেন মর্যাদা রাখতে পারি সে চেষ্টা থাকবে। মেয়র বলেন, আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে নগরবাসীর সহযোগিতাও প্রত্যাশা করি।
নগরের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, শহরের যানজট নিরসন, সবুজায়ন, পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধিসহ চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা এবং এখানকার ঐতিহাসিক কীর্তি সংরক্ষণে বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ওশান অ্যামিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণ করব। এ জন্য জায়গা অধিগ্রহণের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, বাকলিয়া এলাকায় জলাধার নির্মাণসহ আবাসন তৈরি প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীতে চর-বাকলিয়া এলাকায় জেগে ওঠা বিশাল এলাকায় আধুনিক মানের পর্যটন পার্ক নির্মাণ প্রকল্প, মদুনাঘাট হতে কালুরঘাট ও শাহ আমানত ব্রিজ হয়ে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে নতুন সার্কুলার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। জঙ্গল সলিমপুরের ১২০ একর জায়গা বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে সেখানেও নয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত প্রায় দেড় বছরে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও আলোকায়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদার সরিয়ে শহরের সৌন্দর্য ফেরানোর উপর জোর দিয়েছি। এজন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের জন্য শহরকে ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। তেমন ভাঙা কোনো সড়ক নাই। রাস্তাঘাট মোটামুটি গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করে রেখেছি। বর্ষায় যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্তার করে ফেলেছি। অন্যান্য যেসব সড়ক আছে সেগুলো আড়াই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় থেরাপি সেন্টার এবং কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজনের লক্ষ্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া বারইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য সেবক নিবাস নির্মাণ, বিভিন্ন এলাকার সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং সিটি গভার্ন্যান্স এর আওতায় প্রকল্পের কাজ চলছে। এছাড়া ফুটপাত উন্নয়ন, বিবিরহাটে বাণিজ্যিক ভবন ও কিচেন মার্কেট নির্মাণ, বঙিরহাট ও ফিরিঙ্গিবাজারে কিচেন মার্কেট উন্নয়ন ও নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরে উন্নয়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া চতুর্থ মেয়র রেজাউল : ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র হিসেবে শপথ নেন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় অভিষিক্ত প্রথম ব্যক্তি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মেয়র ছিলেন বিএনপি’র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনিও পতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান। ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর মেয়র ছিলেন প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার পর ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এরপর ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আ.জ.ম নাছির উদ্দীন মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। এদের কাউকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিকের বর্তমান (ষষ্ঠ) পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন রেজাউল করিম চৌধুরী। ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলে তিনি হবেন চতুর্থ মেয়র।
মন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন ঢাকার দুই মেয়র : গেজেট প্রকাশের জন্য গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো পত্রে প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক আল মামুন মুর্শেদ স্বাক্ষর করেন। ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হচ্ছে।