আওয়ামী আসলে দেশ চালাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে। সেই শক্তির নির্দেশে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার। গতকাল শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, আমাদের পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, আমাদের প্রশাসন আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে; প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে তারা আজকে কুক্ষিগত করেছে, দলীয়করণ করেছে, তাদের লোক ছাড়া কেউ কোথাও যেতে পারে না। দলীয় লোক না হলে চাকরিও মেলে না দাবি করে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করে দেখেন, অনেকে বিসিএস পরীক্ষা দেয়, তাদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হয় না, তাদের ‘ডিএনএ টেস্ট’ করা হয়। তারা কোন দলের, তাদের বাবা–মামা–চাচা–ভাই কেউ বিএনপির সঙ্গে জড়িত কি না, তাহলে আপনার চাকরি হবে না পাস করেও, কোয়ালিফাই করেও। টাকা ছাড়া কোনো চাকরি হয় না দাবি করে ফখরুল বলেন, একজন স্কুলের পিয়নের চাকরি ১৫ লাখ টাকার নিচে হয়? এই একটা অবস্থায় তারা দেশটাকে নিয়ে এসেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নেতাদের মুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই বিক্ষোভ হয় যুব দলের উদ্যোগে। সৌদি আরব থেকে পবিত্র ওমরাহ পালনের পর এই প্রথম বিএনপি মহাসচিব এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি অংশ নিলেন।
নির্বাচনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, প্রতিবার নির্বাচনে তারা একেকটা নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করে। এবার করেছে ডামি নির্বাচন। ডামি নির্বাচন কী– সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে, সেই সঙ্গে বিরোধী প্রার্থী বানাবে, সেটাও ডামি প্রার্থী থাকবে। সেই সঙ্গে ওই গৃহপালিত দল, তাদেরকে তারা সিলেক্ট করে দেবে যে আপনার দল থেকে ১০ জনকে আমরা পার্লামেন্টে নেব, যদি না দেওয়া হয় তখন তারা কান্নাকাটি জুড়ে দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনে যাব না। তখন তারা (ক্ষমতাসীনরা) বলে, ঠিক আছে, ঠিক আছে তুমি ১০টাই পাবা যাও। এই একটা অবস্থার মধ্যে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে নিয়ে গেছে। একটা তামাশা, একটা কৌতুক। আমরা এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে বলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করেন বিএনপি নেতা। দেশের মানুষ লড়াকু জানিয়ে ফখরুল বলেন, সব কিছু সব সময়ে তারা মেনে নেয় না। সাময়িকভাবে হয়ত আন্দোলন কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। অনেক বলেন, আবার আন্দোলন শুরু হবে। আরে আন্দোলন তো চলছে।
সরকারকে সতর্ক করে বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সেই জনগণকে বাধ্য করবেন না রাস্তায় বেরিয়ে আসতে, উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে আপনাদের মসনদকে ভেঙে চুরমার করে দিতে।
যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্ব এবং শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহিন, ইছহাক সরকারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুব দলের এম মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।