বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় পা ফেলে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই চোখের সামনে পড়ে কলিজার টুকরোতুল্য সন্তান ২৪ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীর গুলিতে শহীদ হওয়া পুত্র শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর কবর। কদম আর সামনে বাড়ে না সন্তান হারানো পিতা বাদশা মিয়ার। হাতের ডান পাশের কবরে শুয়ে আছে ছেলেটি। হাত বাড়ালে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। শুনতে পায় না ‘বাবা’ বলে অধিকারের সুরে ডাকা একটি আদর মাখা শব্দ। তবুও প্রতিদিন সন্তানের কবরে গিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন শহীদ তানভীরের বাবা। আজ ১৮ জুলাই তানভীর সিদ্দিকীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

গেল এক বছর কেটেছে তার চোখের জলে। গতকাল বৃস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়ে তার বাবা বাদশা মিয়ার সাথে দেখা হয় কবরস্থানের ঠিক মধ্যখানে সন্তানের কবরের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। তখনো নীরব কান্নায় বুক ভাসাচ্ছিলেন এই সন্তানহারা পিতা। শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর বাবা দৈনিক আজাদীসহ উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথোপকথনে জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকার আওয়ামী দোসরদের অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হয়ে বাড়িঘর ত্যাগ করে চট্টগ্রাম শহরে পানের ব্যবসা করে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় তানভীর সিদ্দিকীকে ভর্তি করিয়েছিলেন সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে। গেল বছর ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শামিল হয়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়ে গুলিতে নিহত হয় ছেলে তানভীর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে লক্ষ্য বেকার ছাত্র জনতার কর্মসংস্থান ও বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে আমার ছেলেসহ হাজারো ছেলের জীবনের বিনিময়ে আওয়ামী দর্শনের পতন ঘটে। একজন শহীদের বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি আমি। কিন্তু সন্দিহান হই– আমার সন্তানের খুনিদের বিচার দেখে যেতে পারব কিনা। কেননা এক বছর পেরিয়ে গেল এখনো মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার হয়নি। বরং আওয়ামী দোসররা আমাদেরকে আবারো বাড়িঘর ছাড়া করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে আমার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়–স্বজনকে বিভিন্নভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
প্রসঙ্গত, আজ ১৮ জুলাই ও পরদিন ১৯ জুলাই দুই দিনব্যাপী মৃত্যুবার্ষিকী পালনের বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী স্মৃতি ফাউন্ডেশন।












