জনসমর্থন হারিয়ে সরকার ‘গুম’কে টিকে থাকার অবলম্বন করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, গুম হচ্ছে একদলীয় দুঃশাসনের নমুনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গুমকে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এ গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দূর হবে এবং জন জীবনে স্বস্তি ফিরবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন।
সমাবেশ শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কালো ব্যানার নিয়ে নূর আহম্মেদ সড়ক থেকে মৌন মিছিল শুরু করে নেভাল মোড়, লাভ লেইন হয়ে কাজীর দেউরী মোড় হয়ে পুনরায় নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী ও বোয়ালখালীর নজরুল ইসলাম বাচা চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য মানুষ। আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কক্সবাজারের সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারা দেশে বিএনপির ছয়শ জনের অধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। আজকে রাজনৈতিক কারণে গুমের শিকার মানুষ মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করছে। তিনি বলেন, গুমের ধারা বয়ে চলতে চলতে দেশ অরাজকতার ঘন অন্ধকারে ডুবে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আসুন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধি, তরুণ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। জোরপূর্বক গুমের শিকার প্রায় ১০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককে অনেকদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, তাদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। এতেই বুঝা যায় এসব গুমের হোতা কারা। বাংলাদেশে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। গণতন্ত্রের কবর রচনার জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। বিএনপিকে নির্মূল করে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বহুদিন পর অনেককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখনো অসংখ্য গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। এক্ষেত্রে প্রায় সবাই দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব এম এ আজিজ, এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, এরশাদ উল্লাহ, হারুন জামান, মাহবুব আলম, নিয়াজ মো. খান, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, জাহিদুল করিম কচি, মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, মোহাম্মদ শাহেদ, এইচ এম রাশেদ খান, বেলায়েত হোসেন বুলুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
দক্ষিণ জেলা বিএনপি : কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে লাভলেইন পর্যন্ত মৌন মিছিল করেছে দক্ষিণ জেলা বিএনপি। মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, গুম এখন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বড় হাতিয়ার। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার জন্য সরকারই দায়ী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী, আদুল গাফফার চৌধুরী, এম মন্জুর উদ্দীন চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মুজিবুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, খোরশেদ আলম, মফজল আহমদ চৌধুরী, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম সওদাগর, শফিকুল ইসলাম রাহীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।