চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে নগরের প্রতিটি খাল পরিষ্কার করাকে নিজের নৈতিক দায়িত্ব মনে করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। একইসঙ্গে খাল–নালায় গৃহস্থালীসহ অনান্য ময়লা–আবর্জনা না ফেলাকে নগরবাসীর দায়িত্ব বলে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে প্রতিটি খাল পরিষ্কার করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আপনাদেরও (নগরবাসী) দায়িত্ব আছে, আপনাদের সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ পরিষ্কার করতে গিয়ে পলিথিন, প্লাস্টিক, লেপ–তোষক, টিভি কাভারসহ এমন কোনো জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না খালে। এসব খালে ফেলবেন না। একইসঙ্গে কেউ যেন খালে না পেলে সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখবেন, প্লাস্টিক, পলিথিন ও ককসিট অপচনশীল হওয়ায় যুগ যুগ ধরে থেকে যাবে এবং এগুলো জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি গতকাল সকালে নগরের চান্দগাঁও থানার ওয়াপদা অফিসের মুখে ডোম খালের মাটি উত্তোলন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। এসময় ডা. শাহাদাত বলেন, ফরিদার পাড়া, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পানি জমে থাকে। মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন। আমরা কাজ শুরু করেছি যাতে এবারের বর্ষায় যতটুকু সম্ভব জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে পারি। আমরা চেষ্টা করছি শহরের ভেতরে যতগুলো নালা ও সমুদ্র, নদীতে পানি যাওয়ার প্রবাহ সেগুলো চালু করার। পরের বর্ষায় যাতে পানি চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি।
মেয়র বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একসময় গ্রামাঞ্চলে কৃষি উন্নয়নের জন্য খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন, আর আজ শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে আমাদের সেই একই উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৩৬টি খালে কাজ করছে। বাকি ২১টি খাল পরিষ্কারের কাজ আমাদের করতে হবে। কিন্তু খাল পরিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়; জনসচেতনতা বাড়ানোও অত্যন্ত জরুরি। আমি দেখেছি, খালগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, নালার মধ্যে ময়লা ফেলবেন না, বিশেষ করে প্লাস্টিক, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, ও ককশিট। কারণ এগুলো জলাবদ্ধতার মূল কারণ। বর্তমানে পলিথিনের কারণে খালের উপর চার–পাঁচ ফিট স্তর জমে গেছে, যা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
এসময় মেয়র কর্পোরেশনের কর্মচারীদের ময়লা ফেলার জন্য প্রয়োজনে প্রতিটি দোকানের সামনে বিন দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, যারা বিনে ময়লা না ফেলে খালে ফেলবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স এবং হোল্ডিং নম্বর বাতিল করা হবে। যদি কোনো দোকানের সামনে ময়লা পাওয়া যায়, তবে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আমরা পচনশীল ভাত, মাছ, ডিম ইত্যাদি এবং অপচনশীল পলিথিন, প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করার পরিকল্পনা করছি। এসব বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, জৈবসার এবং বায়োগ্যাস উৎপাদন সম্ভব। এতে বর্জ্য সম্পদে পরিণত হবে এবং যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার প্রবণতা কমবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি।