সরকারিভাবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদেরকে প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমিতে করা তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বোরো ও রবিশস্য আবাদে। উপজেলা দু’টিতে চলতি মৌসুমে ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে, বাড়ির আঙিনা, নদীরপাড় কিংবা স্কুলের মাঠ, কোনো খালি জায়গা বাদ যায়নি যেখানে তামাক চাষ হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই এ অঞ্চলে কৃষি বিভাগের বোরো ও রবি শস্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কেবলমাত্র কাগজে-কলমেই অর্জিত হয়, বাস্তবে নয়।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৪ সালে লামা উপজেলার মেউলার চর এলাকায় প্রথম বছর ১০ একর জমিতে তামাক চাষের মধ্য দিয়ে লামায় তামাক চাষ শুরু হয়। তারপর থেকে গত ৩৭ বছরে মাতামুহুরী নদীর পলিবাহিত উর্বর এলাকা এবং জ্বালানি কাঠের সহজলভ্যতার কারণে তামাক চাষ গ্রাস করেছে লামা, আলীকদমের বোরো ও রবি মৌসুমের ফসলি জমি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌমুমেও লামা, আলীকদম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১০ হাজার একরের অধিক জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির আওতায় উপজেলা দু’টিতে কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। ফলে ফসলি জমিতে একচেটিয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বোরো ও রবি শস্য আবাদে। তরি-তরকারির ভরা মৌসুমেও এখানে দাম ঊর্ধ্বমুখি। ফসলের মাঠে নেই তৈলবীজ জাতীয় কোনো ফসল। নেই বৈচিত্র্যময় তরি-তরকারি। বোরো মৌসুমের সবুজ ধান ক্ষেতে এখন দোল খায় তামাকের উচ্চ ফলনশীল গাছের ডগা।
জানা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, নগদ ঋণ, সর্বোপরি বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এর ফলে কৃষকরা প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও ফসলি জমিতে বোরো ও রবি শস্যের আবাদ না করে ক্ষতিকর তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদেরকে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন।
কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৬শ’ কৃষককে বিভিন্ন ফসলের উপর প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ধান, চীনা বাদাম. ভুট্টা, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। প্রয়োজনীয় বীজ ও বিভিন্ন ধরনের সার প্রদান করা হচ্ছে। ১৫শ’ কৃষককে বোরো বীজসহ প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পাওয়ার টিলার, সেচ যন্ত্র ও কীটনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিনও প্রদান করা হচ্ছে। তারপরও কৃষকেরা ক্ষতিকর তামাক চাষে আগ্রহী বেশি।
তামাক চাষীদের সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আলু, মরিচ, টমেটোসহ বিভিন্ন তরি-তরকারি এবং তৈলবীজ উৎপাদন করলে তা বাজারজাতকরণে নানামুখি সমস্যায় পড়তে হয়। পক্ষান্তরে তামাক চাষ করলে বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা রয়েছে। তাছাড়া তামাক বিক্রির সমুদয় টাকা প্রায় একসাথেই পাওয়া যায়। যার কারণে অন্য ফসলের তুলনায় তারা তামাক চাষে আগ্রহী।
লামা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকুমার দেওয়ানজী জানান, তামাক চাষ কমিয়ে আনার জন্য কৃষি বিভাগ নানাভাবে কাজ করছে। তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদেরকে বিভিন্ন ফসলের উপর প্রণোদনা দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তামাক চাষ কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চীনা বাদাম, ভুট্টা, গম, সরিষাসহ যেসব শস্যের উপর সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে সেসব ফসল শতভাগ বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত হলে তামাক চাষ কমে আসবে বলে স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।