প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি করছে সরকার চার দেশ থেকে আসবে ৬ লাখ টন

সিন্ডিকেট ও বাজার নিয়ন্ত্রণ, দুর্যোগ মোকাবেলায় বড় মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে

হাসান আকবর | সোমবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চাতালের সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ, খরাবন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সর্বোপরি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ভারত থেকে ৪ লাখ টনসহ প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি করছে। ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে মোট ৬ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমার ও ভারত থেকে বেশ কিছু চাল দেশে এসেছে। আগামী ২৬ ও ২৮ ডিসেম্বর প্রায় ৪৫ হাজার টন চাল নিয়ে মিয়ানমার থেকে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। দেশে গতকাল সরকারি গুদামে চালের মজুদ ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। বিশাল মজুদের মাধ্যমে দেশের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপই এসব চাল আমদানির অন্যতম উদ্দেশ্য বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক হলেও সরকার সামনের দিনগুলোতে বন্যা এবং খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা চিন্তা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সরকার আমেরিকা থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানির পর জিটুজি চুক্তির আওতায় চারটি দেশ থেকে ৬ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৪ লাখ টন। এছাড়া মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন করে চাল আমদানি করছে। তবে এলসিতে ৫ শতাংশ প্লাসমাইনাসের কথা উল্লেখ থাকায় প্রতিটি দেশ থেকে মূলত ৫২ হাজার ৫শ টন করে চাল আমদানি হবে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের জন্য সরকার বিপুল পরিমাণ গম আমদানি করছে। এর মধ্যে শুধু আমেরিকা থেকে আসবে বছরে অন্তত ৭ লাখ টন গম। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিছুটা বাড়তি দামে আমেরিকা থেকে এসব গম আমদানি করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির চাপে পড়ে বাংলাদেশকে আগামী ৫ বছর এভাবে গম আমদানি করতে হবে। প্রতি বছর আমেরিকা থেকে ৭ লাখ টন গম আনা হবে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, বাজারদর কিছুটা বেশি হলেও গমের মান ভালো। তাছাড়া দূরত্বের কারণে জাহাজ ভাড়া কিছুটা বাড়তি হওয়ায় খরচ বাড়ছে। তবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই।

দেশে চালের সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, গতকাল দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে ১৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৫ টন চাল এবং ৩৭ হাজার ১৫৭ টন ধান রয়েছে। বিপুল এই মজুদের মাঝে আগামী ২৬ ডিসেম্বর এমভি গোল্ডেন সেঞ্চুরি নামের একটি জাহাজে ২২ হাজার ৫শ টন এবং ২৮ ডিসেম্বর এমভি রাইট ওশন নামের জাহাজে ২২ হাজার ৫শ টন চাল মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। অপরদিকে ভারত থেকে মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে চারটি ছোট জাহাজে বেশ কিছু চাল পৌঁছেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের চাল চট্টগ্রামেও খালাস হবে। এছাড়া পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম থেকেও চালবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করবে।

কৃষকদের ঘরে নতুন ধান উঠেছে। ঘরে ঘরে রয়েছে প্রচুর ধান ও চাল। তবুও সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানি করছে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানিকৃত চাল ও গম দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই চালগম দেশের খুচরা বাজারে তথা ভোক্তা পর্যায়েও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, চালের বাজার নিয়ে সিন্ডিকেট যেন সক্রিয় হতে না পারে সেজন্য সরকার বড় ধরনের মজুদ গড়ে তুলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউল্টো পথে সিএনজি টেক্সি, বাধা দেওয়ায় পুলিশের ওপর হামলা
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ ইশমামের ভাইকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২