প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা নিবারণে সবচেয়ে উপযুক্ত পানীয় কী

মোঃ ইকবাল হোসেন | বৃহস্পতিবার , ২২ মে, ২০২৫ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

খাদ্যের অন্যতম একটি প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি। পানির অপর নাম বলা হয় জীবন। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০৭০% পানি দ্বারা গঠিত। মানুষের শরীরের বয়স ওজন উচ্চতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করার প্রয়োজন হয়। এই প্রচণ্ড তাপদাহে অনেকক্ষেত্রে আমরা পিপাসা মেটাতে বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি অন্য কিছু পানীয় পান করে থাকি। যেমন বিভিন্ন রকমের ফলের রস, লেবুর শরবত, কোমল পানীয় ইত্যাদি। তবে তৃষ্ণা নিবারণে সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় যেকোনো পদ্ধতিতে মাটির নিচ (ভূগর্ভস্থ) থেকে উত্তোলিত পানি।

কেন বিশুদ্ধ পানি সবচেয়ে উপযুক্ত?

আমাদের শরীরের প্রতিটা অর্গানের কার্যক্রম একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। শরীরের হরমোনের কার্যকারিতা, PH এর ব্যালান্স, হার্টবিট সবকিছু একটা নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে থাকতে হয়। আমাদের শরীরে রক্ত, ইউরিনসহ যত প্রকারের তরল আছে তার বেশিরভাগেরই PH 7 এর খুব কাছাকাছি (গ্যাস্ট্রিক জুস ব্যতীত)। তাই আমাদের শরীর 7 PH এর পানীয়তেই সবচেয়ে ভালো কর্মক্ষম হবে। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানির বিকল্প কিছু নেই।

অন্য পানীয় কেন নয়!

ফলের রস: ফলের রস নিঃসন্দেহে অনেক উপকারী, কিন্তু তা বেশি খাওয়া যাবে না। একেকটা ফলের চঐ একেক রকম, কোনোটা একটু এসিডিক আবার কোনোটা একটু ক্ষারীয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ফলের রস খেলে আপনার শরীরের PH এর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই দিনে একবার ২৫০৩০০ মিঃলিঃ এর বেশি ফলের রস খাওয়া যাবে না। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে পরিমান আরো কম হবে।

এছাড়াও ফলের রসে প্রচুর ইলেট্রোলাইট থাকে। বেশি খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। যা কিডনীর উপরে চাপ তৈরী করবে। তবে আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক হোন, শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি হয়, তাহলে আপনি কিছুটা বেশি পরিমাণে খেতে পারেন।

লেবুর শরবত: লেবুর শরবত বেশ স্বাস্থ্য বান্ধব। তবে আমরা যেভাবে লেবুর শরবত খায় সেটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করতে পারে। প্রথমত লেবু একটি এসিডিক ফল, এর PH হচ্ছে ৭ এর কম। তাই অতিরিক্ত লেবুর শরবত খেলে শরীরের PH এর ভারসাম্য নষ্ট হবে। দেখা যায় আমরা একগ্লাস পানিতে ২৩ টা লেবুর রস দিচ্ছি, যা আপনার শরীরের PH এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট করে। আমরা লেবু খায় ভিটামিন ‘সি’ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলির জন্য। যার জন্য ছোট এক টুকরা লেবুই যথেষ্ট। তাই লেবুপানি খেলে একগ্লাস পানিতে ছোট একটু করা লেবু দিয়ে খাওয়া যাবে।

স্যালাইন পানি কেন নয় : স্যালাইন পানি মূলত ডায়রিয়া রোগীদের জন্য। আপনি পিপাসা মেটাতে স্যালাইন পানি খেলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হবে। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যেতে পারে আবার। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ঠাণ্ডা পানি কেন খাবেন না : অনেকে পিপাসা মেটাতে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি খান। ঠাণ্ডা পানিতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি সরাসরি পান না করে, কক্ষ তাপমাত্রায় পৌঁছালে পান করতে হবে। অথবা ঠাণ্ডা পানির সাথে নরমাল পানি মিশিয়ে পান করতে হবে। আমাদের শরীরের প্রতিটা অর্গান ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

বোতলজাত পানি: বেশিরভাগ বোতলজাত পানিই রাসায়নিক ব্যবহার করে বিশুদ্ধ করা হয়। সেক্ষেত্রে কিছু রাসায়নিকের উপস্থিতি পানিতে থেকে যেতে পারে। আবার রাসায়নিকভাবে পরিশুদ্ধ করার কারণে পানি থেকে কিছু খনিজের পরিমানও কমে যায়। এই কারণে বোতলজাত পানির স্বাদে কিছুটা পরিবর্তন আসে।

কোমল পানীয় কেন নয় : কোমন পানীয় কখনই স্বাস্থ্যবান্ধব নয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা, PH এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই তৃষ্ণা নিবারণে এগুলো কোনোভাবেই পান করা যাবে না।

তাই পিপাসা মেটাতে সবসময় ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানি পরিমিত পারিমাণে পান করতে হবে। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত পানি পান করলে স্বাস্থঝুঁকি তৈরী হতে পারে। তবে এই বিশুদ্ধ পানি পান করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, এতে আর্সেনিক এবং আয়রনের পরিমান আমাদের শরীরে অনুমোদিত সীমার মধ্যে আছে। এ ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

লেখক: জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসার সমুদ্র
পরবর্তী নিবন্ধএকাত্তরের শহীদ প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুর হোসেন