সকাল ১০টা বাজলেও শীতের সকাল আড়মোড়া ভাঙছিল তখনও, কুয়াশার ফাঁক গলে রবির আলো ফোটা তখনও বাকি; এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢাকা লিট ফেস্টে জড়ো হয়ে যান অনেক সাহিত্যানুরাগী।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকায় দশম এই সাহিত্য সম্মিলনীর যখন উদ্বোধন হয়, বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন ছিল একেবারে পরিপূর্ণ। দেশি-বিদেশি লেখক, কবি-সাহিত্যিক আর চিন্তাবিদদের এই মিলনমেলার আড্ডা-গল্পে নতুন চিন্তা উন্মেষের আবাহনে শুরু হয় আয়োজন। নোবেল পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক আব্দুলরাজাক গুরনাহ আর ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষসহ অতিথিদের নিয়ে চার দিনের ঢাকা লিট ফেস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। খবর বিডিনিউজের।
আয়োজকরা বলছেন, এবারের আসরে ১৭৫টির বেশি অধিবেশনে অংশ নেবেন পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদ। মূলত ইংরেজি ভাষার সাহিত্য নিয়ে দশম এই উৎসবে যোগ দিতে দর্শনার্থীদের প্রথমবারের মত কাটতে হচ্ছে টিকেট। উৎসব ঘিরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টলে থরে থরে সাজানো হয়েছে বই; বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে কয়েকটি ভেন্যুতে চলবে আলোচনা অনুষ্ঠান।
ঢাকা লিট ফেস্ট উপলক্ষে প্রথমবার ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছেন ২০২১ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী তানজানিয়ান-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক গুরনাহ। এ উৎসবে সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন নতুন সব বিষয় উন্মোচিত হবে বলে তিনি আশা করছেন। ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় এ বাংলায় তার পূর্বপুরুষদের শেকড়ের কথা তুলে ধরেছিলেন।
সেদিকে ইঙ্গিত করে আব্দুলরাজাক গুরনাহ বলেন, অমিতাভ ঘোষের মত আমি বলতে পারব না, এখানে আমার শুরুটা কীভাবে এবং কীভাবে আমি এর সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, আমি এই প্রথম ঢাকায় এবং বাংলাদেশে এসেছি, এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশের এই অংশেও প্রথম। সুতরাং, আমি আশা করছি, এমন কিছু বিষয় উন্মোচন হবে, যা আমি আগে কখনো দেখিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনায় পরিবেশিত মনিপুরী নৃত্যে অভিভূত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেই নৃত্য পরিবেশনায় আমি নতুন উন্মোচনের কিছু স্বাদ পেয়ে গেছি। খুবই সুন্দর নাচ, মনোরম পোশাক, গান আর ঢাকীদের অসাধারণ উদ্যমী পরিবেশনা। আমি এখানে আসতে পেরে আনন্দিত। এটা অসাধারণ একটা শুরু। পরবর্তী অন্য সব আয়োজনের অপেক্ষায় আছি।
নিজের পারিবারিক যোগসূত্রের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিজের আত্মিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ। তার মায়ের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বর্তমান গোপালগঞ্জের, বাবার পূর্বপুরুষরা মুন্সীগঞ্জের। সেই প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের সব গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমরা বাংলাদেশের কথা সবসময় বলতাম। অমিতাভ বলেন, ভারতে বড় হওয়ার কারণে বাংলাদেশ নিয়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ‘অনুপস্থিত’। আমাদের মত যারা দেশভাগের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, কেবল তারাই জানি, সেই অনুপস্থিতিটা আসলে কী।
এই উৎসব বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে নতুন আলো ও দ্যুতি ছড়াবে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, এর সাথে যারা সম্পৃক্ত হয়েছে এ আয়োজনকে ভালো একটি রূপ দেওয়ার জন্য, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমি দশম ঢাকা লিট ফেস্টের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত তিন বছর বন্ধ ছিল ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজন; মহামারীর ধাক্কা পেরিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অনিশ্চয়তার মধ্যেই এল এবারের উৎসব।