চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি গত শনিবার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের ভার্চুয়াল সম্মেলনে বলেছেন, চট্টগ্রামবাসীর একটি দাবি আছে মেট্রোরেল। আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ খুব দ্রুত করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হবে দেশের দ্বিতীয় এক্সপ্রেসওয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফিজিবিলিটি স্টাডি একবার করেছিল। এখন দ্বিতীয়বার করছি। চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাতে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি) বদ্ধপরিকর। কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৬৯ শতাংশ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বছরের শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যাবে যে, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের প্রায় অর্ধশত শতাব্দী যাত্রার জন্য আমরা সত্যিই গর্বিত। এটি আমাদের সার্বিক চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দৃশ্যমান। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য দৃশ্যমান। শিল্প খাতের অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অবকাঠামোতে ভালো রকমের উন্নতি হয়েছে। আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে উন্নয়ন ঘটেছে মানুষের জীবনমানে ও মানব উন্নয়ন সূচকে।’ প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন পর্যায়ক্রমিকভাবে বলেছেন যে নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রত্যাশিত গড় আয়ু প্রভৃতি সূচকে আমরা আসলে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নৈপুণ্যের দিক থেকে পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছি আমরা। মূলত তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অর্থনীতির মধ্যে বিপুল বৈষম্য দ্বারা তাড়িত হয়ে আমাদের পুরো মুক্তি-স্বাধীনতা আন্দোলন আবর্তিত হয়েছিল এবং অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ৫০ বছর পর এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে মাথাপিছু আয় ও সম্পদ সঞ্চয়ন, প্রজনন হারে নিয়ন্ত্রণসহ আরো অনেক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছি। পাকিস্তান আমলে আমাদের বাস্তবতা ছিল জনমিতিক হিসাবে জনসংখ্যায় বেশি হলেও সার্বিক উন্নয়ন থেকে কম সুফল পেয়েছি। আজকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু মাথাপিছু আয়ে তারা আমাদের চেয়ে কম।
দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, ঠিক সেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো চট্টগ্রামের। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের বিশেষ অবদান রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিকে দৃষ্টিপাত করলে সেই অনুপাতে চট্টগ্রামবাসী প্রত্যাশিত কিছু পেয়েছে বলে মনে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছে সে অনুপাতে চট্টগ্রামবাসীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি মূল্যায়িত হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি। চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটিও অক্ষুণ্ন রাখতে পারিনি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকি। এটি কেবল বলার খাতিরে বলা। তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। যদিও চট্টগ্রামবাসী তার প্রয়োগ দেখতে চাই। চট্টগ্রামকে তার যোগ্য মর্যাদা দিতে প্রায় সকলে বলে থাকেন। আজ যেভাবে সেতুমন্ত্রী বললেন, এর আগে অনেক মন্ত্রী নানা আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নকে নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তারপরও আমরা বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করি। প্রধান প্রধান সমস্যা নিরসনে তাঁদের আন্তরিকতা দেখি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে হবে এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, চট্টগ্রামেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। তবে আমাদের মনে হয় এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন কম হয়েছে। প্রত্যাশার চট্টগ্রাম গড়তে সরকারকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
আমরা এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তা স্বীকার করে আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে সামনে। বর্তমানে আমরা বৈশ্বিক মহামারিতে দিন অতিক্রম করছি। এরপরও দেশের অর্থনীতির অগ্রসর হওয়াকে অভিনন্দিত করতে চাই। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা বিপুল প্রতিযোগিতার সামর্থ্য দেখাচ্ছেন। কৃষকরা ফসল উৎপাদন আগের চেয়ে লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বাড়িয়েছেন। এ খাতে বহুমুখিতা এনেছেন। গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে এসএমইর সংযোগ বিদ্যমান। তারাও উল্লেখযোগ্য সৃজনশীলতা প্রদর্শন করেছে। সব মিলিয়ে বলা যায় অপ্রত্যাশিত অর্জন।
সে হিসেবে আমরা চট্টগ্রামের উন্নয়ন চাই কায়মনোবাক্যে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প শেষ হলে, কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামকে আমরা প্রত্যাশার চোখে দেখতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস। মেট্রোরেল করার দাবিও নেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। শুধু এটুকু বলতে চাই, চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কোনো কাজই সঠিকভাবে আলোর মুখ দেখবে না।