যে কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্প পরিকল্পনায় গলদ থেকে যাচ্ছে বা যাদের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একনেক সভায় সংশোধনের জন্য উপস্থাপিত ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর এবং ব্যয় ২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব আসায় প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল প্রকল্পে ডিজাইন ছিল না। কাদের গাফিলতির জন্য প্রকল্পের ডিজাইনটা ইনকারেক্ট হলো, আমাদের সময়-অর্থ দুটোই অপচয় হলো, তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যেন এমন আর না হয়, সেজন্যও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে প্রকল্প যখন তৈরি করা হয়, তখন কি এই সকল বিষয় দেখেন নাই? আপনারা কি তাহলে প্রকল্পের সাইটে যান নাই, তাহলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন? তিনি বলেছেন, আপনারা আইন লঙ্ঘন না করে আইনের প্রতি সম্মান রেখে অন্যান্য ঠিকাদাররা যাতে আসতে পারে, যাতে করে ঠিকাদারি কাজে বৃহদাকারে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, আপনারা সেই দিকে নজর দেবেন।
দায়িত্বহীনতা নিয়ে এক লেখায় ইউসুফ শরীফ বলেছেন, দায়িত্বহীনতা এক মারাত্মক অসুখ। এই অসুখ থেকে মুক্ত থাকার জন্যই জনকল্যাণে দায়িত্বশীলতার চর্চা মানব সভ্যতার যাত্রাপথে এত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সদিচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, উপযুক্ত উদ্যোগ-আয়োজন থাকা সত্ত্বেও শুধু দায়িত্বহীনতার কারণে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে, হয়ে যায়। এ জন্যই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার বিকল্প নেই। তারপরও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাঝে মধ্যেই এমন সব দায়িত্বহীনতার কথা শোনা যায়- যার দংশনে মানবিকতা আহত, উন্নয়ন পঙ্গু এবং মানুষকে স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে পড়তে হয়। নানা পর্যায়ে, নানাজনের গুরুতর সব অনাকাঙ্ক্ষিত দায়িত্বহীনতার কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত ও হতবাক হতে হয়। যারা এসব দায়িত্বহীনতার শিকার, তাদের যে ক্ষতি হয়ে থাকে, তা কে পোষাবে এবং কীভাবে পোষাবে- কেউ জানেন না, জানার কথাও নয়। কারণ সাধারণ মানুষের সাধারণ বা স্বাভাবিক চিন্তায় এরকম ধরে নেওয়াটাই সঙ্গত যে, দায়িত্ব পালনে কারো কোনোই শৈথিল্য থাকবে না- সকল পর্যায়ে দায়িত্বশীলরা সমভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে, যত্নসহকারে দায়িত্ব পালন করবেন এবং জনগণ তার কল্যাণ-স্পর্শ লাভ করবে- তাদের জীবন-মানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটবে- জীবনধারণ সহজতর হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ফলে এমন দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়েছেন। কাজে গাফেলতি ও দায়িত্বহীনতার খবর আমাদের শুধু স্তম্ভিত ও হতবাকই করে না, বরং বিবেককেও দংশিত করে। এই দংশন এ কারণে যে, আজো আমরা সমাজে ন্যূনতম দায়িত্বশীলতার চর্চা নিশ্চিত করতে পারিনি এবং এ কারণে উন্নয়নে-উৎপাদনে সিস্টেম লস কমানো যাচ্ছে না। তদুপরি যথাসময়ে প্রকল্প-কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় বার বার ব্যয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যবস্থায় যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে রফতানিপণ্যের মান উন্নয়ন ও সংরক্ষণ যথাযথ হচ্ছে না। এতে করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থা ও রফতানি প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাতগুলোতে বর্তমান সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বহুমাত্রিক উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করা হচ্ছে। বহুমুখী না হলেও বিশেষ করে তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রফতানি খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব উদ্যোগ-আয়োজনের সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার চর্চা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন মহলের দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গও সঙ্গত কারণেই আসতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরে দায়িত্বশীলতা বহাল থাকলে নিচে দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই শিকড় গেড়ে বসতে পারে না।
প্রত্যেক কাজে যথাযথ তদারকি যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন কাজে গতি আনয়ন। প্রকল্প কাজে জবাবদিহিতা থাকলে সংশ্লিষ্টরা অধিকতর সচেতন থাকবেন এবং কাজে মানও উন্নত হতে বাধ্য। যাদের কাজে গাফিলতি থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।