নগরীর অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সি–বিচের উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামে কোনো প্রকল্পের ব্যাপারে এর আগে কখনো এমন সমন্বয় দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করে পর্যটকেরা বলেছেন, নিশ্চয় এবার ভালো কিছু হবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম পতেঙ্গা সি বিচ পর্যটন এলাকা পরিদর্শনে যান। এই সময় তিন সংস্থারই প্রধান উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পতেঙ্গা সি বিচকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিমের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেহাল হয়ে থাকা পতেঙ্গা সি বিচ এলাকাকে একটি পর্যটকবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এলাকার বাতি, শৌচাগার, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পুরো এলাকাটিকে মানুষের শ্বাস নেয়ার একটি স্থানে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সিডিএর পক্ষে এককভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং দর্শনার্থীরাও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি অনুধাবন করে সিডিএ পতেঙ্গা সি বিচ উন্নয়নে একটি সমন্বিত উদ্যোগের উপর গুরুত্বারোপ করে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৯টা নাগাদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে রিং রোড ও পতেঙ্গা সি–বিচ সংলগ্ন ৬ কিলোমিটার এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ, উপ–প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আবু ঈসা আনছারী, সিস্টেম এনালিস্ট মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল, ঊর্ধ্বতন স্থপতি মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী চৌধুরী এবং জেলা প্রসাশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে পতেঙ্গা সি–বিচ উন্নয়ন প্রকল্পের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার তাগাদা দেয়া হয়। এসব কার্যক্রমের মধ্যে বাগান স্থাপন, বৈদ্যুতিক আলোকায়ন এবং পর্যটকদের ওয়াকওয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা, ডিজাইন অনুযায়ী রংয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, সি–বিচ এলাকায় বিদ্যমান ইলেকট্রিক লাইট সচল করা এবং বাগানের চারপাশে স্টিল পোস্টের বেষ্টনী নির্মাণ করে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এছাড়া পতেঙ্গা এলাকার আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২২ একর জমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি পর্যটন কেন্দ্র বিকাশের লক্ষে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু করারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এসব কাজ ত্বরান্বিত করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলীকে সভাপতি করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সম্মিলিত কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তারা চট্টগ্রামের পর্যটন খাতের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার কথাও বলেন এসময়।
গতকাল তিন সংস্থা প্রধানের সমন্বিত এই পরিদর্শন পতেঙ্গা এলাকাবাসী এবং পর্যটকদের দারুণভাবে উৎসাহিত করেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটি একটি দারুণ ব্যাপার যে মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান এবং ডিসি একই সাথে একটি প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। এভাবে সমন্বয় থাকলে চট্টগ্রামের সব ক্ষেত্রের উন্নয়নও গতিশীল হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিম গতরাতে দৈনিক আজাদীকে জানান, আসলে এককভাবে কোনো ভালো লক্ষ অর্জন করা যায় না। পতেঙ্গা এলাকায় আমরা একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবো। এতে সবার সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ রয়েছে। আমরা তিন সংস্থাই আজ সরজমিনে সবকিছু দেখে এসেছি। আমরা সমন্বিতভাবেই কাজ করবো। সামনের দিনগুলোতেও আমরা চসিক মেয়রের নেতৃত্বে আবারো বসবো। আমরা সবাই নগর নিয়ে ভাবছি, এখন পৃথক পৃথকভাবে না ভেবে আমরা সমন্বিতভাবে ভাববো।