প্যারেড মাঠ উন্মুক্ত ছিল। কোনো বাধা ছাড়াই চলত নানা খেলাধুলা। চলত প্রাতঃভ্রমণ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার উপস্থিতি থাকত। সেই খেলার মাঠে ২০১৩ সাল থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা। মাঠে প্রবেশের অনেকগুলো গেট থাকলেও খোলা থাকে মাত্র একটি। বাকি গেটগুলো বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে দেয়াল টপকে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ঢুকছে কিশোর-তরুণরা। এতে করে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে প্রাতঃভ্রমণে আসা মানুষকে।
দুর্ঘটনা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ জানলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গেটগুলো খুলে দিয়ে মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু গেট খুলে দিলে তো হবে না, নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। গেটের জন্য দারোয়ান বা গার্ডের প্রয়োজন রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের কর্মচারী নেই। সংকট রয়েছে লোকবলের। প্রয়োজনীয় লোকবল পাওয়া গেলে গেটগুলো খুলে দিতে সমস্যা নেই।
কর্তৃপক্ষের আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে, আর্থিক সংকট। অর্থ থাকলে অস্থায়ী গার্ডের ব্যবস্থা করা যেত। হোস্টেল খোলা থাকলে সেখান থেকে যে অর্থ আসত তার একটি অংশও ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে হোস্টেলগুলো। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাঠে প্রবেশের গেটগুলো খুলে দেয়া যায় কিনা এ নিয়ে গত শনিবার শৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকা হয়। তবে সেখানে গেটগুলো খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্যকে ‘অজুহাত’ হিসাবে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, এখানে সদিচ্ছার অভাব আছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রবেশের গেট বন্ধ থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে স্থানীয়রা। তারা বলছেন, কয়েকটি গেট বন্ধ থাকায় অনেক দূর ঘুরে গিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়। না ঘুরে সহজে মাঠে ঢুকতে হলে দেয়াল টপকাতে হয়। এতে ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার থাকে না। বিশেষ করে চন্দনপুরা, ডিসি রোড, কাপাসগোলা, পাঁচলাইশসহ আশপাশের লোকদের গেট বন্ধ থাকার বিষয়টি বেশি ভোগাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, আমি কেবি আমান আলী রোড এলাকায় থাকি। বিকালে বন্ধুদের নিয়ে কলেজ মাঠে খেলতে যাই। আমরা ঘুরে গিয়ে খোলা থাকা একমাত্র প্রবেশপথটি ব্যবহার করি না। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ি। এতে আমাদের সময় বাঁচে।
প্রাতঃভ্রমণকারী মো. ইসমাইল বলেন, জাতিসংঘ পার্ক এলাকায় আমার বাসা। আগে এ পার্কের ভেতর স্ত্রীসহ হাঁটাহাঁটি করতাম। এখন ওখানে হাঁটা যায় না। তাই প্রতিদিন প্যারেড মাঠে প্রাতঃভ্রমণে যাই। অন্যান্য গেট বন্ধ থাকায় ঘুরে গিয়ে উন্মুক্ত থাকা একমাত্র গেটটি ব্যবহার করি। সব দিকের গেট খোলা থাকলে সবার
জন্য ভালো হয়। মাঠের গেট কেন বন্ধ থাকবে তা বুঝতে পারছি না।
নজরুল ইসলাম নামে মাঠ ব্যবহারকারী একজন বলেন, মাঠের চারপাশে গেট আর গেট। দেখে মনে হয় জেলখানা। একটু প্রশান্তির খোঁজে মাঠে যাই। কিন্তু সেখানেও শান্তি মেলে না। আসলে আমাদের কপাল খারাপ।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমি গেট খুলে দিতে চাই। শনিবার এ নিয়ে শৃঙ্খলা কমিটির সভাও হয়েছে। কিন্তু গেট খুলে দেয়ার বিষয়ে সদস্যদের পক্ষ থেকে মতামত আসেনি।
তিনি বলেন, আসলে লোকবলের সংকট রয়েছে। গেটগুলো খুলতে হলে লোকবল লাগবে। আমরা কিছুদিন আগে লোকবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তবে এখনো পাইনি। শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব। লোকবল পাওয়া গেলে গেটগুলো খুলে দেব।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির আজাদীকে বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। তারা ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। কলেজ ক্যাম্পাস এলাকা মুক্ত রাখাটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তারা সেটি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। গেটে কোনো দারোয়ান বা গার্ডের দরকার নেই।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, প্যারেড মাঠে অনেক খেলাধুলা করেছি। আমার মনে হচ্ছে এখানে মনের সংকট রয়েছে। আমরা পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। এটিসহ আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। তবে চিন্তা ও মূল্যবোধের বিকাশ সেভাবে হয়নি। মাঠের প্রয়োজন আছে কিনা, খেলাধুলার প্রয়োজন আছে কিনা, সেসব নিয়ে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থ সংকটে খেলার মাঠে প্রতিবন্ধকতা থাকবে, এটা কোনো কথা হলো! আসলে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আমরা সিআরবির জন্য আন্দোলন করেছি। মাঠে প্রতিবন্ধকতা বন্ধেও রাস্তায় নামতে হবে।
কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গেট খুলে দিন। কিসের অভাব রয়েছে আপনাদের? দানবাঙ বসান। আপনারা এ আয়োজনটা করেন। অর্থ সংকট লাঘব হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে প্যারেড মাঠকে ঘিরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে, সীমানা দেয়ালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খেলাধুলা ও প্রাতঃভ্রমণের জন্যই মাঠের উন্নয়ন করা হয়।