চট্টগ্রামের পতেঙ্গাস্থ যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা ও ফতুল্লা ডিপোতে পাঠানো তেলের রেকর্ডে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৫ লিটার তেল সরবরাহ হিসাব মিলছে না, গত সেপ্টেম্বরেও ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬১ লিটার ঘাটতি পাওয়া যায়। ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল বুধবার দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ এর একটি দল পতেঙ্গা টার্মিনালে ও যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়। গতকাল দুদকের একটি দল অভিযোগের বিষয়ে যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয় এবং পতেঙ্গার টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করেন। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ এর একটি দল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান চালায়। এসময় তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একইসঙ্গে আলোচ্য অভিযোগের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহণ করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা হয়।
দুদক জানায়, প্রাথমিক যাচাই বাছাইয়ে সরকারি তেল সরবরাহের রেকর্ড ও গন্তব্য ভিত্তিক হিসাবপত্রে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৫ লিটার তেল সরবরাহে গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যমুনা অয়েলের পতেঙ্গা টার্মিনাল থেকে ফতুল্লা ও কুমিল্লা ডিপোতে পাঠানো জ্বালানি তেলের সরবরাহে ২ লাখ ৬২ হাজার ৮০৪ লিটার ঘাটতি ধরা পড়ে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও একই রকম গরমিল দেখা গেছে। ওই সময় আরও ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬১ লিটার তেল ঘাটতি পাওয়া যায়। এ নিয়ে আরও বিশদ অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন তেলের ডিপো থেকে প্রায় পৌনে ৪ লাখ লিটার জ্বালানি তেল চুরি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ পায় দুদক। এরপ্রেক্ষিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। বুধবার দুপুরে দুদকের কর্মকর্তারা প্রথমে যমুনা অয়েলের পতেঙ্গা টার্মিনালে যান, সেখানে দুদক কর্মকর্তারা অভিযোগের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেন। পরে টার্মিনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজিএম (টার্মিনাল) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান দুদকের টিমকে তেল সরবরাহ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র প্রদান করেন। সেখান থেকে দুদকের কর্মকর্তারা যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। কার্যালয়টিতেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহণ করেন।
দুদক জানায়, প্রাথমিক রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, প্রথম চালানে চট্টগ্রাম থেকে ১ কোটি ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৫ লিটার তেল সরবরাহ করা হলেও ফতুল্লার (ট্যাংক–২২) ও কুমিল্লা ডিপোতে তেল পৌঁছায় ১ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার ১৩ লিটার তেল। তখন ঘাটতি পাওয়া যায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯২ লিটার তেল। দ্বিতীয় চালানের চিত্র ছিল উল্টো। ওই চালানে ৪০ লাখ ৮৬২ লিটার তেলের বিপরীতে ফতুল্লা (ট্যাংক– ২২,২৩) ডিপোতে ৪০ লাখ ৬ হাজার ৭৫০ লিটার তেল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ওই চালানে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৮৮৮ লিটার তেল বেশি পাওয়া যায়। দুই চালানে মোট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ৮০৪ লিটার তেল। এছাড়া, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও ১ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৬০৮ লিটার তেল পতেঙ্গার যমুনা টার্মিনাল থেকে ফতুল্লা (ট্যাংক ২২,২৩) ডিপোতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ফতুল্লা ডিপোতে তেল পাওয়া যায় ১ কোটি ৭ লাখ ৩ হাজার ৪৭ লিটার তেল। এখানেও ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬১ লিটার তেল ঘাটতি পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমদ বলেন, কমিশনের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আরও খতিয়ে দেখে পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরুত–ই–ইলাহী বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা এসেছেন, তারা রেকর্ডপত্র নিয়েছেন। আমরা তাদের সব সহযোগিতা করেছি যাতে তারা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারেন। তবে তেল গায়েব হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’