বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি দেশ। একাত্তরের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি খুব সহজেই যে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উঠে এসেছে, তা নয়।
সমপ্রতি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবেও স্বীকৃতি মিলেছে দেশটির। এই অল্প সময়ে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পিছনে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের যথাযথ মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক। কৃষক, শ্রমিক, জেলে, কামার-কুমার সহ সরকারি- বেসরকারি সকল নাগরিকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বর্তমান অবস্থানে উঠে এসেছে এ দেশ। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশের প্রতি সীমাহীন অবদান রেখে চলছে কৃষক এবং শ্রমিক শ্রেণী। নিঃসন্দেহে এটি অস্বীকারের অবকাশ নেই। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত এই দেশে শ্রমিক এবং কৃষক সমাজ অবহেলিত একটি শ্রেণী।
বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৬ শতাংশ পূরণ করে তৈরি পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস) খাত, যা বাংলাদেশের গত বছরের সর্বমোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ। মোট প্রবৃদ্ধির ৬-৮ ভাগ আসে শুধু তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকেই। কিন্তু পোশাক শিল্পের শ্রমবাজারে শ্রমিকদের দাসের মতো ব্যবহার করা হয়। সেকালে দাস কেনা-বেচার প্রচলন ছিল। প্রভু বা মুনিবেরা দাস ক্রয় করে যা ইচ্ছে তাই করতে বাধ্য করতো। এখনো কিন্তু সে প্রচলনের রেশ যায়নি। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মডার্ন হয়েছে। এখন মুনিব বা প্রভুর আসনে পুঁজিপতি বা ধনিক শ্রেণী এবং দাসের আসনে শ্রমিক শ্রেণী। পুঁজিপতিদের নিকট শ্রমিক শ্রেণী দাসের মতো নিষ্পেষিত, নির্যাতিত হচ্ছে। গড়ে দিনপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা মাইনে শ্রমিকদের খাটানো হলেও মিলেনা সরকারি ছুটি! সরকারি অন্যান্য পেশাজীবীদের বিশেষ দিনে ভাতাসহ ১০-১৫ দিনের ছুটি মিললেও পোশাক শ্রমিকদের ঈদ উপলক্ষে মিলেনা সপ্তাহ খানেক ছুটি। এতো বৈষম্য কেন? পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা দাস নয়! এ বৈষম্যের ইতি টানতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নীতিগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কাম্য।
আজিজুল হক, সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ।