পোলিও সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২২ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

পোলিও একটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মারাত্মক রোগ। পোলিও ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পক্ষাঘাত ঘটাতে পারে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।

যে কোনো বয়সের মানুষ এই রোগে সংক্রমিত হতে পারে, তবে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এখন পোলিও মুক্ত। পোলিও টিকাদানের সফলতায় ২০১৩ সালে এ দেশ পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনিসেফ অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। পোলিও দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয়। গতকাল দুপুরে প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২। এতে ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রুহেলা খান চৌধুরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইলেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মতিউর রহমান। এ সময় অন্যান্যের মাঝে ডিস্ট্রিক্ট ফার্স্ট পিপি জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, এরিয়া ডাইরেক্টর ডা. মইনুল ইসলাম মাহমুদ, প্রোগ্রাম চেয়ার ইঞ্জিনিয়ার জামালুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারি মো. শাহজাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পোলিও নির্মূলে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু এলাকায় এখনো পোলিওর প্রকোপ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে প্রকোপ থাকায় যে কোনো সময় এ রোগ বাংলাদেশে আবারো দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সকলের মাঝে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। শিশুকে টিকাদানের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অবশ্যই পোলিও টিকা দিতে হবে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) পোলিও দিবস বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, পোলিও সচরাচর পাঁচ বছরের নিচের বয়সের বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। শরীরের নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রমণ করে প্যারালাইজড করা থেকে শুরু করে পঙ্গুত্ব, অনেক সমস্যাই পোলিওর কারণে হয়ে থাকে।

পোলিও ভাইরাস শরীরে মুখের মধ্য দিয়ে প্রথমে প্রবেশ করে গলায় বসে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে অন্ত্রের মধ্যে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসে। মুখে ঢোকার পরে গলার মধ্যে থাকা কোনো কোষের আবরণে এই ভাইরাসের একটি স্পেসিফিক রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে। এটি সহজে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। বিশেষ করে কেউ পোলিও আক্রান্ত হলে তার পায়খানা দিয়ে সহজে জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্তের শরীরের গলায় এবং অন্ত্রে জীবাণুটি থাকে।

তাই কাশি দিলে অথবা যেখানে-সেখানে কফ ফেললে তার থেকে বেরিয়ে আসা ড্রপলেট ছড়িয়ে অন্যকে সহজে আক্রান্ত করতে পারে এবং সেই সঙ্গে অন্ত্রে থাকার কারণে পায়খানা দিয়ে জীবাণুটি অতি সহজে ছড়ায়। এমনকি আক্রান্তের শরীর ভাল হয়ে গেলেও জীবাণুটি অনেকদিন পর্যন্ত (প্রায় ২০ সপ্তাহ) অন্ত্রে থেকে গিয়ে পায়খানার মধ্য দিয়ে ছড়াতে পারে।

দুই-তৃতীয়াংশ আক্রান্তের শরীরে শুরুতে পোলিও কোন সিমটম (লক্ষন) প্রকাশ করে না। এক তৃতীয়াংশের শরীরে জ্বর গলাব্যথা, মাথাব্যথা, ঘাড় নাড়াতে না পারা, সারা শরীরজুড়ে ব্যথা করা এমন সবকিছু সমস্যাসহ আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সচরাচর লক্ষণ উপসর্গগুলো কারও ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিন, কারও ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে চলে যায়।

তবে অল্প কিছুসংখ্যক আক্রান্তের দেহে সমস্যাটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শরীরের স্পাইনাল কর্ড এবং ব্রেন পোলিও ভাইরাসের তারা আক্রান্ত হলে সমস্যা তখন মারাত্মক হয়ে ওঠে।

পোলিও আক্রান্ত হলে কিছু সাপোর্ট ট্রিটমেন্ট ছাড়া এর সরাসরি তেমন একটা চিকিৎসা নেই। তাছাড়া পোলিও আক্রান্ত হয়ে সিরিয়াস হয়ে গেলে, বিশেষ করে প্যারালাইসিসের দিকে গেলে, পূর্ণাঙ্গ নিরাময়ে তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তাই আগে থেকে পোলিও ভ্যাকসিন দেয়াটাই এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়।

বিশ শতকের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যু অথবা পঙ্গুত্ববরণের পেছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল এই পোলিও। ১৯৫০ সালে আমেরিকান চিকিৎসক উইলিয়াম হেমন পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন।

তবে এখনও পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গায় বিশেষ করে এশিয়া আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশে শত ভাগ পোলিওমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। যদিও গত শতাব্দীর ৯০ দশকের মধ্যেই পৃথিবীর ৯৯ ভাগ অংশকে পোলিওমুক্ত করা হয়েছে।

জন্মের পর বাচ্চার বয়স যখন দুই মাস হয় তখন থেকে তাকে দুই মাস অন্তর মিনিমাম তিনটি ডোজ, পরে ১৮ মাস, ৪ বছর এবং ছয় বছর সময়ে অতিরিক্ত আরও তিনটি ডোজ দিলে শরীর পূর্ণাঙ্গভাবে পোলিও সুরক্ষিত থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলো বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধলুলো রোজ : সবচেয়ে বড় গোলাপি হিরা পাওয়া গেছে আফ্রিকায়