পেশাজীবী কোনো খাত নিয়ে রাজনীতি করার কোনো ধরনের ইচ্ছে নেই বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গতকাল রাতে মেয়রগলির চশমাহিলের বাসভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর হাসপাতালটির চিকিৎসকদের সাথে নওফেলের এটি-ই প্রথম মতবিনিময় সভা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান, চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির, চমেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ, চমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহানারা চৌধুরী, হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রবীর কুমার দাশ, মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল, সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আনোয়ারুল হকসহ অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে নিজ নিজ বিভাগের সমস্যা-সংকটগুলো তুলে ধরেন বিভাগীয় প্রধানরা। তাছাড়া চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয় বৈঠকে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রত্যেকের দায়িত্বের ব্যাপারে আমরা কিভাবে মনোযোগ সহকারে কাজগুলো করতে পারি, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করে নওফেল বলেন, একটা বিষয় নিশ্চিত করতে চাই- দৌঁড়ে হোক, গিয়ে হোক, কথা বলে হোক, আলোচনা করে হোক, প্রত্যেকটা সমস্যা সমাধানের জন্য আমি যাতে করে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত হতে পারি। এবং আপনাদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মানুষের সেবাটা যাতে নিশ্চিত হতে পারে।
নওফেল বলেন, রাজনীতিতে আমরা যারা আছি, আমরা সবাই আসলে বক্তৃতা দিতে ভালোবাসি, হাততালি পেতেও ভালোবাসি। তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমার কোনো ইচ্ছে নেই, কোনো পেশাজীবী খাত নিয়ে রাজনীতি করার। সেটি চিকিৎসা কিংবা শিক্ষা, কোনো খাত নিয়েই রাজনীতি করার ইচ্ছে আমার নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে হাঁটছে, এর সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মান আমরা নিশ্চিত করতে না পারি।
চিকিৎসকদের সবচেয়ে মেধাবী পেশাজীবী উল্ল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আসলে আমাদের দেশে যে ধারা চলে আসছে, তাতে করে সবচেয়ে মেধাবী পেশাজীবীদের আমরা যথাযথভাবে সম্মানিত করতে পারছি না। অনুরূপভাবে শিক্ষা ক্যাডারেও সেটি আমরা দেখছি।
অর্গানোগ্রাম চমেক হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে নওফেল বলেন, এরপরই ক্যাপাসিটি সমস্যা, সফট ক্যাপাসিটি। ভৌত অবকাঠামোকে হার্ডওয়্যার ধরলে চিকিৎসকরা হাসপাতালের সফটওয়্যার বলে অভিহিত করেন তিনি। ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটালেও সফটওয়্যার ছাড়া তো এটি চলবে না। এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। আর এই সফটওয়্যার হচ্ছেন আমাদের চিকিৎসকরাই। চমেক হাসপাতালের দিকে সারা চট্টগ্রামের মানুষ থাকিয়ে থাকে। তাই এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবাটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, কোভিড নিয়ে প্রথম দিকে চট্টগ্রামে যে ভীতির সঞ্চার, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল, পরবর্তীতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সে ঝড় আর নেই। জেলাপ্রশাসক, সিভিল সার্জন, সাবেক মেয়রসহ চিকিৎসকদের সার্বিক প্রচেষ্টায় মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্য সেবাটা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আগামীতেও (শীত মৌসুমে) যে ঢেউটা আসছে, তাও আমরা সফল ভাবে ম্যানেজ করতে পারবো বলে আমরা মনে করি।
সাধারণের চিকিৎসায় চমেক হাসপাতাল ছাড়া চট্টগ্রামে কোনো অপশন নেই মন্তব্য করে নওফেল বলেন, ঢাকায় কিন্তু মানুষের অনেক অপশন আছে। অন্যান্য জায়গাতেও মোটামুটি আছে। কিন্তু ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে সে অপশনটা নেই। কেন নেই, এর উত্তরও নেই। হয়তোবা এটা আমাদের দুর্বলতা। অবশ্যই এটা আমাদের দুর্বলতা বলতেই হবে। আমাদের সরকার, দুর্বলতা স্বীকার করতে আমরা পিছ পা হবো না।