চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সংলগ্ন ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সে (ইনমাস) ক্যান্সার নির্ণয়ে অত্যাধুনিক পেট–সিটি (পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি) ল্যাব স্থাপন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে সাইক্লোট্রন (রেডিও আইসোটোপ উৎপাদনকারী মেশিন) স্থাপনের জন্য ভবনের নিচে বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে। ল্যাবের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে কোথাও পেট–সিটি ল্যাব না থাকায় ক্যান্সার নির্ণয়ের এই অত্যাধুনিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে রোগীদের। অনেক রোগী ঢাকায় যাতায়াতের ধকল নিতে না পারার কারণেও পরীক্ষাটি করতে পারছেন না। ফলে প্রায়শ চিকিৎসকদের কিছুটা ধারণার ভিত্তিতেও রেডিওথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অথচ পেট–সিটি পরীক্ষা করানো গেলে রোগীর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের উৎপত্তি এবং কোথায় কোথায় এই ক্যান্সার কোষ ছড়িয়েছে, সেটি বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসাও আরো নিখুঁতভাবে দেয়া যাবে। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষের দিকে পেট–সিটি ল্যাব পুরোদমে চালু করা সম্ভব হবে বলছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাস, ইনমাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস, রাজধানীর অদূরে সাভার বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও ঢাকার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে পেট সিটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে পেট সিটি পরীক্ষার প্রধান উপাদান রেডিও আইসোটোপ উৎপাদনকারী ‘সাইক্লোট্রন’ মেশিন আছে কেবল নিনমাস বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাস এবং অপরটি ঢাকার একটি কর্পোরেট হাসপাতালে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর শুধু পেট সিটি মেশিন রয়েছে। তারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে রেডিও আইসোটোপ নিয়ে পেট সিটি পরীক্ষাটি সম্পন্ন করছে। চট্টগ্রামে সাইক্লোট্রন মেশিন স্থাপিত হলে প্রাইভেট সেক্টরের অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু পেট সিটি মেশিন কিনে পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে পারবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইনমাস চমেক ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন, মলিকুলার ল্যাব ও সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পেট–সিটি মেশিন রয়েছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে ৯০ শতাংশের বেশি ক্যান্সার শনাক্ত করা হয় পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (পিইটি) ও সিঙ্গেল প্রোটন ইমিশন কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (এসপিইসিটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পেট–সিটির মাধ্যমে দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব, তাই এটি আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম উদাহরণ। পেট সিটি অন্যান্য ইমেজিং টেকনোলজি যেমন এঙ–রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই প্রভৃতি প্রযুক্তি থেকে ভিন্নমাত্রার। কারণ ওইগুলো শুধু শরীরে টিউমারের আকার, আকৃতি, অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেয়। কিন্তু পেট সিটি ক্যান্সার (ম্যালিগন্যান্ট টিউমার) বা ক্যান্সার নয় (বিনাইন টিউমার) দুটো সম্পর্কেই ধারণা দিতে সক্ষম। পেট একটি টিউমারের বিপাক ক্রিয়া এবং সিটি ওই টিউমারের গঠনগত পরিবর্তন নির্ণয় করে। এই দুটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এই দুটো ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে শরীরের যেসব স্থানের কোষগুলো বেশি সক্রিয় অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
জানতে চাইলে ইনমাস চট্টগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক ডা. পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পেট–সিটি পরীক্ষা কার্যক্রম আশা যাচ্ছে চলতি বছরের শেষের দিকে শুরু করা যাবে। যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি চলে এলে স্থাপন শেষে কাজ শুরু করা যাবে। বেসরকারি পর্যায়ে পেট–সিটি পরীক্ষায় খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সরকারি পর্যায়ে চালু হলে সেই খরচ নেমে আসবে অর্ধেকে। অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।