পেকুয়ায় স্বামীর হাতে নৃশংসভাবে গৃহবধূ হত্যার ঘটনায় নিহতের মা মর্তূজা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় ঘাতক স্বামী আলমগীর সহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। পেকুয়া থানার মামলা নং ০৬ তারিখ : ২৪/০৯/২০২০। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত সালমা আক্তারের মা মর্তূজা বেগম বাদী হয়ে ঘাতক স্বামী আটক আলমগীরসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অপরাপর আসামিরা হলো স্বামী আলমগীরের ভাই বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বিতর্কিত ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ বনরাজা জাহাঙ্গীর, পিতা জাফর আহমদ ও মা মদুনী বেগম।
আসামিদের মধ্যে ঘাতক আলমগীরকে ঘটনার দিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে আটক করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর স্বামীর হাতে চরম নির্যাতনের শিকার সালমা আক্তার চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ছনখোলা পাহাড়ি এলাকার জাফর আহমদের পুত্র ঐ ওয়ার্ডের বিতর্কিত ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ভাই আলমগীর প্রকাশ ডাকাত আলমগীর তার নববিবাহিতা স্ত্রী সালমা আক্তারকে নিজ বাড়িতে ৩ দিন ধরে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং বিনা চিকিৎসায় বন্দি করে রাখে।
এমনকি আহত সালমা আক্তারের শরীরের সিগারেটের ছ্যাকা ও গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতনের অভিযোগও করেছে তার পরিবার।
মামলার বাদী মর্তূজা বেগমের অভিযোগ, গত ২ মাস আগে জোর করে তুলে এনে টইটং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পন্ডিতের পাড়া এলাকার দরিদ্র মৃত বাদশার মেয়ে সালমা আক্তার(১৪)কে বিয়ে করে ঘাতক আলমগীর।
এরপর থেকেই তার উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল সে কিন্ত ২১ সেপ্টেম্বর গৃহবধূ সালমার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটলে ঘাতক নিজেই তাকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে যায়।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমা আক্তার।
সালমা আক্তারের সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বেডে মায়ের কাছে মুমূর্ষু গৃহবধূ সালমা আক্তারের আকুতি ছিল “আমাকে শয়তানটার বাড়িতে আর কোনোদিন পাঠিও না।”
অপরদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে মা খুনের ঘটনায় এখনও কেউ মামলা করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে আটক ছেলে নাছির উদ্দিনকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহতের স্বজনরা অজানা কারণে এ ঘটনায় মামলা করতে কেউ আগ্রহী নন।
কেউ মামলা না করলেও এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২৩ সেপ্টেম্বর পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভারওয়াখালী এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে নির্মমভাবে খুন হন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা শামশুন্নাহার।
তিনি ঐ এলাকার মৃত হাজি বদিউল আলমের স্ত্রী। এ ঘটনায় ঐদিনই পুলিশ ছেলে নাছির উদ্দিনকে আটক করে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি লোহার রড উদ্ধার করে।
এ দু’টি আলোচিত নৃশংস খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকার বলেন, “গৃহবধূ সালমা হত্যার ঘটনায় নিহতের মা মর্তূজা বেগম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আর ছেলের হাতে মা খুনের ঘটনায় তার স্বজনরা কেউ মামলা করতে আগ্রহী নন।”
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম বলেন, “গৃহবধূ সালমা হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করা হয়েছে। আর মা হত্যার ঘটনায় স্বজনদের কেউ মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।” প্রথম ঘটনায় আসামিদের ধরতে ইতিমধ্যে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলে জানান তিনি।