পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের স্থগিত ফাঁসিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ব্যাপক গোলাগুলি, হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে ৬ পুলিশ ও দুই প্রার্থীর ২৪ সমর্থক সহ মোট ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আহতদের কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত ২৮ নভেম্বের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন বারবাকিয়া ইউনিয়নের ওই কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। বাকি ৮ ওয়ার্ডের ফলাফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম ৩০৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে আবারো শংকা নিয়ে আজ ৩০ ডিসেম্বর ওই কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র আরো জানায়, সকাল ৮টার দিকে ভোট শুরু হওয়ার পর ১ ঘণ্টা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করে কেন্দ্রে ব্যাপক গোলযোগ শুরু হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১২১ রাউন্ড গুলি ও ২ রাউন্ড টিয়ারসেল ছোড়ে।
অপরদিকে, সন্ত্রাসীরাও কয়েকশ’ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, “কিছু জনতা অবৈধভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে কেন্দ্রে গোলযোগ ও দখলের চেষ্টা করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এসময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে পুলিশও গুলি চালায়।”
এতে পুলিশের এসআই আশরাফুল হক, এসআই নাজমুল হোসেন, এএসআই রূপম, এএসআই তৌহিদ, কন্সটেবল কাইয়ুম ও আনিছ আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, পুলিশ এসময় ১২১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ২ রাউন্ড টিয়ারসেল ছুঁড়েছে।
এদিকে, ব্যাপক গোলযোগের মধ্যে ভোট চলাকালীন বিকাল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জন করেন।
এসময় তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন হয়নি এবং একজন যুদ্ধাপরাধীর সমর্থক জামায়াত নেতাকে জিতিয়ে আনতে পুলিশ আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১৪ জনকে আহত করায় আমি প্রহসনের এ ভোট বর্জন করেছি।”
এসময় তিনি জানান, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর ভাড়াটিয়া শিবির ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে তার বড় ছেলে আসিফ রায়হান কাফির হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে। এছাড়াও তার অপর ছেলে ইয়াসির আনাস, আওয়ামী লীগ কর্মী আমির হোসেন, শাহাদাত হোসেন, পারভেজ, হারুণ বাদশা, ছরওয়ার, নোমান, ভুট্টো, কালুু, শহিদুল ইসলাম সহ ১৪ জন আহত হয়েছেন।
তবে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে নৌকার সমর্থকরা পুলিশ ও সাধারণ ভোটারদের ওপর হামলা চালিয়ে কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করলে প্রশাসন ভোটকেন্দ্রের শান্তিশৃংখলা বজায় রাখতে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়াতেই ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।
এদিকে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ওই কেন্দ্রে মোট ১,৩৩৫ ভোটের মধ্যে ৯৪৫ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।
এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান এএইচএম বদিউল আলম পেয়েছেন ৬৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিএম আবুল কাসেম পেয়েছেন ১৯৬ ভোট। সার্বিক ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মওলানা বদিউল আলম চশমা প্রতীকে ৪,৭৪১ ভোট পেয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিএম আবুল কাশেম ৪,৫৮৭ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে, বিজিত প্রার্থী এএইচ এম বদিউল আলম জিহাদী দৈনিক আজাদীকে বলেন, “প্রশাসন যদি কঠোর হস্তে দমন না করতো তাহলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেভাবে তাণ্ডব শুরু করেছিল তাতে আজকেও ভোটগ্রহণ হতো কি না সন্দেহ। তবে শেষ পর্যন্ত শত শত রাউন্ড গুলির মধ্যেও ৬নং ওয়ার্ডের জনগণ তাদের রায় দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন।”