পেকুয়ায় নিখোঁজের ১৪ দিন পর স্কুল শিক্ষকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

পেকুয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৪ at ৩:৫৯ অপরাহ্ণ

“কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিখোঁজের ১৪ দিন পর এক স্কুল শিক্ষকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পেকুয়া ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ। নিহত স্কুল শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আরিফ (৪৫)।

তিনি পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়া এলাকার মৃত বজল আহমদের পুত্র এবং স্থানীয় সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসার সময় পেকুয়া ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে থেকে ৮-৯ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী শিক্ষক আরিফকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার ১৪ দিন পর আজ ১১ অক্টোবর বিকেল ৪ টার দিকে নিহতের বসত বাড়ির পেছনে একটি পরিত্যাক্ত ডোবা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় নিহত স্কুল শিক্ষক আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, দুপুরে ছোটন (১৫) নামের এক ছেলে পরিত্যক্ত ওই ডোবাতে মাছ ধরতে গেলে ঘাসের স্তুপের নীচে বস্তাবন্দি লাশটি দেখতে পায়। পরে সে স্থানীয় লোকজনকে জানালে পেকুয়া ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা জানান, লাশটি যাথে পানিতে ডুবে থাকে সেজন্য বস্তায় ইট বেঁধে দিয়ে বস্তার উপরে ঘাসের স্তুপ দেয়া দেয়া হয়েছিল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাশের পঁচন ধরে আশপাশের ঘাসেও পঁচন ধরে যায়। এতে করে স্থানীয় ও পুলিশ ধারণা করছেন অপহরণের কয়েকদিন পরেই তাকে হত্যা করে এখানে ফেলে দেয়া হয়।

থানা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর থেকে রুবেল খান (২৮) নামের এক অপহরণকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। আটক রুবেল চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী এলাকার মো: হাবিব উল্লাহ খানের ছেলে।

পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তি নিহত আরিফের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, অপহরণের পরপরই ২৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টায় তার স্ত্রী মেহবুবা তাবাচ্ছুম বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিহতের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আজম উদ্দিনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বসতঘরের পেছনের কিছু জমি নিয়ে মাস্টার আরিফের সাথে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

এর জের ধরেই আরিফকে অপহরণের পর নির্মমভাবে খুন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। নিহতের ভাই শওকত হোসেন জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই ব্যাংক ডাকাত আজম উদ্দিন আমাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন কিছু জমি দখল করে রাখে।

হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরদিন আমার ভাই মাস্টার আরিফ আমাদের জমি পুনরায় দখলে নিলে আজমগীর তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার ভাইয়ের উপর হামলা করে। পরে এ ঘটনার জের ধরেই আমার ভাইকে অপহরণ করে নির্মম ভাবে খুন করা হয়।

পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল মোস্তফা জানান, আমরা অপহরণের ঘটনার রাতেই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রেকর্ড করি এবং পরবর্তীতে পরিবারের চাওয়া অনুযায়ী একটি অপহরণ মামলাও রুজু করি। ২৮ সেপ্টেম্বর হতে অদ্যবদি পুলিশ হন্য হয়ে আরিফকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অপহরণকারীরা পেশাদার হওয়ায় পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

এদিকে নিখোঁজ মাস্টার আরিফের বস্তাবন্দি লাশটি যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির পেছন থেকে উদ্ধারের পরপরই ক্ষুদ্ধ জনতা তার বাড়ি ও তার ভাই আজমগীরের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিডিবি মিটারই গলার কাঁটা ভাড়া, ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জ
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু