এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে এতো টাকা বৃদ্ধি – কল্পনাও করা যায় না। গত সপ্তাহে বাজারে ৫০ টাকার মধ্যে এক কেজি পেঁয়াজ মিললেও এখন এটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। দাম কমানোর জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন, এখন আমদানিই সমাধান। গত রবিবার দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির কথা জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আক্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, একদিকে সরকারের মন্ত্রীরা দাবি করছেন পেঁয়াজের মজুদ যথেষ্ট আছে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। অন্যদিকে বাজার মনিটর করতে না পেরে সরকার ভোক্তাদের অজুহাত দিয়ে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই মন্ত্রীই দাবি করছেন, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমদানি ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তে অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক। অভিযানে মূল্য তালিকা না থাকা এবং ক্রয় বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করার দায়ে বার আউলিয়া ট্রেডার্সকে ৫ হাজার টাকা, ফরিদপুর বাণিজ্যালয়কে ৩ হাজার টাকা এবং জাহেদ নামের একজন বেপারিকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক বলেন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে মধ্যস্বত্বকারী একটা সিন্ডিকেট আছে, যারা পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী। এছাড়া সরবরাহ কমার অজুহাতে যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পরে সেই বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বাজার মনিটরিং আব্যাহত আছে। যেকোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের কাছে সিন্ডিকেটের কিছু নামের তালিকা সংগ্রহে আছে।
সরকারি হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এবার উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের কাছাকাছি, যা বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি। অবশ্য পেঁয়াজ পচনশীল এবং সংরক্ষণকালে ৩৫ শতাংশের মতো নষ্ট হয়, ওজনও কমে। আবার কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ রাখতে হয় বীজের জন্য। তাই কয়েক লাখ টন আমদানি করতে হবে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৮ টাকার মতো। ভারতে উৎপাদন খরচ হয় আরও কম। এ কারণে দাম ধরে রাখতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজ উঠতে না উঠতে এমন দর বৃদ্ধি এর আগে দেখা যায়নি। কৃষক, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা, সবাই এর পেছনে মজুদদারিকে দায়ী করেছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সঙ্কট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে তারা এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।
আমরা মনে করি, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। একটার পর একটা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে কতিপয় ব্যবসায়ী বাজারকে অস্থিতিশীল করার যে পাঁয়তারা শুরু করেছে, তার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। তারা পরোক্ষভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আমদানি করে হোক, কিংবা বাজার তদারকি করে হোক পেঁয়াজের বাজার আয়ত্তে আনতে হবে।