পেঁয়াজের ঝাঁজের মধ্যেই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পাম অয়েলের বাজার। সপ্তাহ না ঘুরতে পাইকারিতে মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে বুকিং দর বেড়েছে ১৭০ ডলার। এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণ আমদানি না হওয়ায় বাজারে পাম অয়েলের সংকট রয়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে থাকে। দেখা যায়, আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যের বিরাট ব্যবধান।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। সপ্তাহ না ঘুরতেই তা ৭০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায় ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী আলমগীর পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ২০দিন আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ৬৪০ থেকে ৬৫০ ডলার। কিন্তু বর্তমানে সেই বুকিং দর ৮১০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। পাম অয়েল প্রধানত আমদানি হয় মালয়েশিয়া থেকে। সেখানেও পণ্যের ঘাটতি আছে জানতে পেরেছি। তবে আজ (গতকাল) প্রতিমণে ২০০ টাকা কমেছে। কারসাজির বিষয়টি সঠিক নয়। সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে এটিই বাজারের ধর্ম।
ভোজ্য তেলের ডিও ব্যবসায়ী মো. হাসান জানান, প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে। বড় বড় আমদানিকারকরাই দাম বাড়াচ্ছেন। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার সব সময়ই ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটে। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।