পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি মা

লিপি বড়ুয়া | সোমবার , ৩ মার্চ, ২০২৫ at ১২:১৪ অপরাহ্ণ

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘আমাকে তোমরা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব’। তার কথাটির গভীরতায় গেলে আমরা বুঝতে সক্ষম হই যে, দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বড় বড় কর্মযজ্ঞে নারীর প্রেরণা, উৎসাহ আর সন্তানকে স্বশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল ও সুশাসনে বড় করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে কতখানি শ্রমের মহত্ব রয়েছে এবং যিনি এসব করেন তিনি অবশ্যই একজন সফল নারী। বলতে কোনো দ্বিধা নেই পুরুষ নারীকে এগিয়ে দিতে সহায়তা করে বলেই নারীরা আজ স্বীয় চেষ্টায় যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করতে পারছে।

মা হচ্ছেন একজন নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারীনি। গর্ভধারণের ন্যায় জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এ সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীন গৃহীত হয়েছে। তার বিপরীত লিঙ্গ পুরুষ হচ্ছেন বাবা।

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুমাখা শব্দটির নাম হলো মা। এমন মধুর শব্দ পৃথিবীর কোনো অভিধানে আর দ্বিতীয়টি নেই। মা সংজ্ঞাহীন ছোট্ট একটি বর্ণ। সন্তানের জন্য এক অদ্ভুত তৃপ্তিদায়ক শব্দ। মা সমাজের স্তম্ভ। তিনি গর্ভধারিণী একজন মহীয়সী নারী। মা পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। চাওয়াপাওয়া, ভোগের এই নশ্বর পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। পৃথিবীর একজন মানুষ আরেক মানুষকে ভালোবাসার যে কোনো একটা কারণ থাকে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে হলেও কোনো না কোনো প্রয়োজন এখানে লুকিয়ে থাকেই। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা একদম নিখাদ ও লৌকিকতাবিহীন। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের এই যুগে এসেও মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপের জন্য কোনো যন্ত্র আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি মা। নারীর নারীত্বে পরিপূর্ণতা পায় মাতৃত্বে। মা সন্তানের কাছে পুরো বিশ্ব। পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম একটি উপহার “মা”। একমাত্র মা সন্তানের মুখের হাসি দেখার জন্য সব কিছু করতে পারেন। মায়ের চেয়ে গভীর কোনো অনুভূতি নেই। পৃথিবীতে মা সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রমজীবী হচ্ছেন ‘মা’। কারণ তার কোনো কর্মবিরতি নেই। মজুরি নেই। ছুটি নেই। দাবি নেই, শর্ত নেই, স্বার্থ নেই। কেবলই নিঃস্বার্থভাবে সন্তানের জন্য শ্রম বিলিয়ে দেন অকাতরে। ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছিলেন, ‘মাতৃত্বেই সব মায়ামমতা ও ভালোবাসার শুরু এবং শেষ।’ সন্তানের প্রিয় খাবার, প্রিয় বই, প্রিয় রঙ, প্রিয় পোশাক, সন্তানের জীবনের ছোটখাটো বিষয়গুলো, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বহীন বিষয়গুলোও মায়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মায়ের কাছে সন্তান কত না প্রিয়। সে সন্তান যেমনি হোক, ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, বোবা হোক, কানা হোকসব সন্তানই সব মায়ের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্পদ; মানিকরতন। আবার মা শব্দটি আমাদের কাছে এত প্রিয় মায়ের বাহ্যিকতা সন্তানের কাছে অতি নগণ্য। মায়ের হাসি সন্তানের কাছে সেরা উপহার। মা সন্তানের কাছে তেমন কিছুই চায় না। মা শুধু সন্তানের সুখশান্তি আর হাসিমাখা মুখ দেখতে চায়। তবু আমরা কেন যেন মায়ের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ি! আমরা ভুলে যাই প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব মায়ের প্রতি আন্তরিক হওয়া। মায়ের মন, চাওয়াপাওয়া, ইচ্ছাস্বপ্ন এবং প্রিয়অপ্রিয় বিষয়গুলোর প্রতিও সন্তানদের যত্নবান হওয়া দরকার। সকল মা ভালো থাকুক যত্নে থাকুক সন্তানের কাছে। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও অফুরন্ত ভালোবাসা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষ শান্তির দ্বারে পৌঁছাতে পারে না
পরবর্তী নিবন্ধপ্রফেসর ড. ইউনূসের ওপর কেন নিশ্চিন্তে আস্থা রাখা যায়