অনিবার্য জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বাঁচতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে দশগুণ বেশি ব্যয় করতে হবে। অন্যথায় পৃথিবীতে ধেয়ে আসা অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয়কর ঊষ্ণতা এড়ানোর সম্ভাবনা ম্লান হয়ে যাবে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হেনরি নিউফেল্ড তাঁর রিপোর্টে বলেন- ‘ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে পড়া দুর্বল মানুষের লাইন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী খরা, বন্যা, মহামারী,উদ্বাস্তুসহ দৃশ্যমান প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। গেলো বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি পরিমাপ, প্রতিশ্রুতি, নানা দেশের সমঝোতা স্বাক্ষর এবং জলবায়ু বিপর্যয় উপায় নিয়ে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ চলছে’। শতাধিক দেশের পক্ষ্যে একাধিক মধ্যস্থতাকারীর রিপোর্টের নিবিড় পর্যালোচনা করে জাতিসংঘ এ রিপোর্ট পেশ করেন। ধনী দেশগুলো জলবায়ু উদ্যোগের জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার একদশকের পুরোনো প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ করেনি। এ শতাব্দীর মাঝমাঝি সময়ে এ চাহিদা বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে বলে জাতিসংঘের রিপোর্ট বলা হয়েছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (২৬তম কনফারেন্স অফ দ্য পার্টস বা সিওপি২৬) হয়ে গেল। প্রকৃতির মাতাল হাওয়ায় বিভোর বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের কনফারেন্স অব দ্যা পার্টিজ (ঈঙচ২৬) যোগ দিয়ে সবুজ পৃথিবীর আশায় বুক বেঁধে নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উষ্ণয়ান ধরে রাখার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কে-কার কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা পরিমাপ করতে গিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নি:সরণ কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টি দেশ আন্তর্জাতিক আর্থক সংস্থা আগামী বছর থেকে অন্য দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের উন্নয়নে আর করবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন। তবে কয়লাসহ জ্বালানি খাতে বর্তমানে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ চীন ও জাপান এ সমঝোতায় অংশ নেননি। আরেক প্রধান জীবাশ্ম ব্যবহারকারী ভারত বলেছে ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জনে পেীঁছা যাবে। অন্যদিকে আমাদের দেশে শিল্পায়ন এতো জরুরি যে কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং কয়লাভিত্তিক শিল্পায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ নিজেই কার্বণ নিঃসরণকারী দেশের তালিকায় চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে- আমাদের কি শুধু অর্থের দরকার নাকি কার্বন নিঃসরণ কমানো দরকার এ প্রশ্ন সামনে এসেছে। ১৭০ বছরের গ্লোবাল তাপমাত্রার ট্রেকিং রেকর্ড সমীক্ষা চালিয়ে দি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা উল্লেখ করেন- পৃথিবী নামক গ্রহের পুরোটা ২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস (৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ কখনও পেীঁছাবেনা। এদিকে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানোর একমাত্র উপায় কার্বন নিসরণের লাগাম টেনে ধরা। অথচ বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৮০ভাগ এর জন্য দায়ি ভারত-চীন-রাশিয়াসহ সেরা ১০টি কার্বণ নিঃসরণকারী দেশ। গ্লাসগোতে যোগ দেয়া-বিশ্বের সব দেশের প্রতিনিধিরা স্বীকার করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যে দায়ি বিশ্বের ধনীদেশগুলো এবং তাদের ফসিল ফুয়েল বা জীবাষ্ম জ্বালানি আসক্তি। কয়লা, তেল, গ্যাস ব্যবহার ছাড়া যাদের জীবন চলে না। শিল্প কল কারখানা, খাদ্য উৎপাদন, জীবন যাপনের সাথে জড়িয়ে আছে পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও বন ধ্বংস। এর ফলে কার্বণ নির্গমন হচ্ছে এবং বৈশ্বিক তাপ বাড়ছে। পৃথিবীর মানুষ আগাম অনুভব করছে- তীব্র গরম, অতি বৃষ্টি, অনা বৃষ্টি, বন্যা, খরা, ফসলের ক্ষতি, লবণাক্ততা। ব্রাজিলের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বেটো ভেরিশিমো জানান, বাণিজ্যিক স্বাথে পৃথিবীর অন্যতম অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র আমাজন রেনফরেস্ট এর এক-চতুর্থাংশ বন উজার করা হয়েছে। সেখানে গরু পালন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ব্রাজিলের ৮৫ শতাংশ মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের প্রভাব হারে হারে টের পাচ্ছেন। সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভুটানের পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংদি বলেন- এ সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রায় ৪৬টি দেশ যারা এক বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন অথচ তারা তাপ নির্গমনের একশতাংশ জন্য দায়ী নয়। এ ক্ষেত্রে তিনি ভুটানের কথা উল্লেখ করেন- ভুটানে কার্বণ নেতিবাচক এবং ৬০শতাংশ জমি সংরক্ষিত বন। তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছু করেছি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমরা সুরক্ষিত নই। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, হিমালয়ের হিমবাহ গললে বিপজ্জনক উচ্চতা হ্রদ তৈরি হয়ে মহা প্রলয়ংকারী বন্যা হতে পারে। আমরা অনেক কিছু করতে পারি না তাই আমাদের হাতে জলবায়ু সংকট রয়ে যাবে। -যুক্তরাষ্ট্র থেকে