পূর্বাঞ্চলের যাত্রীবাহী সব ট্রেনে ভাড়া বাড়ল, কার্যকর ২০ ডিসেম্বর থেকে

রুটভেদে বেড়েছে ৫ থেকে ২২৬ টাকা আজ থেকে বর্ধিত ভাড়ার টিকিট বিক্রি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী সব ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন করে ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করায় ভাড়া বেড়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত এই ভাড়া কার্যকর হবে বলে পূর্বাঞ্চল রেলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ছে ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পূর্বাঞ্চল রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ নতুন ভাড়া কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বরের টিকিট বিক্রি শুরু হবে আজ ১০ ডিসেম্বর থেকে এবং সেদিন থেকে টিকিটে বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে হবে যাত্রীদের।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। পূর্ব রেলের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাচট্টগ্রাম, ঢাকাসিলেট, ঢাকাকক্সবাজার, চট্টগ্রামকক্সবাজার, চট্টগ্রামসিলেট, চট্টগ্রামময়মনসিংহ ও ঢাকাদেওয়ানগঞ্জ পথে মোট ১১টি সেতুর ওপর পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ২০ ডিসেম্বর থেকে পন্টেজ চার্জ বাড়ানো হয়েছে। সে হিসেবে বাড়ানো হয়েছে ট্রেনের ভাড়া।

পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পন্টেজ চার্জ পুনর্গঠন ও ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে।

গত ২৫ নভেম্বর উপপরিচালক (মার্কেটিং) শাহ আলম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় ২০ ডিসেম্বর থেকে নতুন হার বাস্তবায়নের কথা জানানো হয়। পরে ৮ ডিসেম্বর সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ভূইঞা এতে অনুমোদন দেন।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে প্রতি কিলোমিটার সেতুকে ১৭ কিলোমিটার হিসেবে ধরা হলেও নতুন নিয়মে প্রতি কিলোমিটার সেতু ২৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন রুটে দূরত্ব বেড়েছে ৪ থেকে ৫১ কিলোমিটার পর্যন্ত। দূরত্ব বাড়ায় রুটভেদে ভাড়া বেড়েছে ৫ থেকে ২২৬ টাকা পর্যন্ত।

কোন রুটে কত টাকা বাড়ল : পূর্বাঞ্চল রেলের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকাচট্টগ্রাম রুটে বর্তমানে ৩৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সেতুকালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল নির্ধারণের পর এ দূরত্ব ধরা হয়েছে ৩৮১ কিলোমিটার। ঢাকাচট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করা বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এঙপ্রেস ও সোনার বাংলা এঙপ্রেসের শোভন চেয়ার টিকিটের দাম ৪৫০ থেকে ৪৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৯৯ টাকা। স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৮৫৫ থেকে ৮৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৪৩ টাকা, প্রথম বার্থ ১০৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৮৩ টাকা, এসি আসনের ভাড়া ১০২৫ থেকে বেড়ে ১১৩৩ টাকা এবং এসি বার্থ ১৫৯০ থেকে ১৫৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭৪৬ টাকা।

এই পথের অপর আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৭৭৭ টাকা থেকে ৮০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫৭ টাকা। এসি আসনের ভাড়া ৯৮ টাকা বাড়িয়ে ১০৩০ টাকা, এসি বার্থ ১৪৪৮ টাকা থেকে ১৪৩ টাকা বাড়িয়ে ১৫৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেতু রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য এ পথে চলাচলকারী মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। কমিউটারে ১৭০ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪০৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা করা হয়েছে।

ঢাকাকঙবাজার : ঢাকাকঙবাজার রুটে চলাচলকারী বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন কঙবাজার এঙপ্রেস ও পর্যটক এঙপ্রেসের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬৯৫ থেকে ৬৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৫৯ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা ১৩২২ থেকে ১২৭ টাকা বেড়ে ১৪৪৯ টাকা, এসি আসনের ভাড়া ১৫৯০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে ১৭৪০ টাকা, এসি বার্থের ভাড়া ২২৬ টাকা বাড়িয়ে ২৬৫৬ টাকা করা হয়েছে।

ঢাকাসিলেট : ঢাকাসিলেট রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা, কমিউটারে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ারে ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ৪১০ টাকা, স্নিগ্ধা আসনে ৬৯ টাকা বাড়িয়ে ৭৮৮ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৮০ টাকা বাড়িয়ে ৯৪৩ টাকা, এসি বার্থের ভাড়া ১২৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৬৫ টাকা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামসিলেট : চট্টগ্রামসিলেট পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা, কমিউটারে ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৫ টাকা বেড়ে ৪৭৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৮৫৭ থেকে ৫২ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯০৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৫৭ টাকা বেড়ে ১০৮৭ টাকা, এসি বার্থের ভাড়া ৮৭ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭৮ টাকা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামজামালপুর : চট্টগ্রামজামালপুর পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকা, কমিউটার ১০ টাকা বাড়িয়ে ২৩০ টাকা, শোভন চেয়ার ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১০৪১ টাকা, এসি সিট ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১২৫৪ টাকা এবং এসি বার্থ ৬৯ টাকা বাড়িয়ে ১৯২৫ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকাদেওয়ানগঞ্জ পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি। কমিউটারে ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা, শোভন চেয়ার ৫ টাকা বেড়ে ২৫৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৪৭৮ থেকে বেড়ে ৪৮৯ টাকা, এসি সিট ১২ টাকা বেড়ে ৫৮৭ টাকা, এসি বার্থ ১৭ টাকা বাড়িয়ে ৯২৪ টাকা করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগের এক কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, সড়কে যেমন সেতু ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হয়, রেলপথের ক্ষেত্রে সেভাবে নেওয়া হয় না। টিকিটের মূল্যের সঙ্গে সেটি নেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে সর্বশেষ পন্টেজ চার্জ হিসেব করে ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর মাঝে মাঝে বাণিজ্যিক কারণে ভাড়া বেড়েছে।

রেলওয়ের ভাষায় রেলপথের মধ্যে কোনো সেতু বা সমজাতীয় অবকাঠামো পড়লে ভাড়ার সঙ্গে যে বাড়তি মাশুল নির্ধারণ করা হয়, তাই পন্টেজ চার্জ। সেক্ষেত্রে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুকে আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ফলে পথের দূরত্ব কাগজেকলমে বেড়ে যাবে। আর সেই অনুপাতে মাশুল আরোপ করা হয়েছে।

রেলের আয় বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে এভাবে পন্টেজ চার্জ বা মাশুল আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। যাচাইবাছাই ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে চলতি ডিসেম্বরে। সাধারণ ট্রেন ও বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য আলাদা করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে
পরবর্তী নিবন্ধনারীদের সামনে রেখেই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ