ইঞ্জিন ও বগি সংকটে ভুগছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ২ জোড়া যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী। নতুন ১৫০ মিটারগেজ বগি দেশে না আসা পর্যন্ত বগি সংকট কাটছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শীঘ্রই দোহাজারী রুটে এক জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী আবুল কামাল চৌধুরী। তিনি বলেন, লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগির কিছুটা সংকট রয়েছে। দোহাজারী রুটে চালানোর মতো ছোট ইঞ্জিন নেই। নতুন বড় যে ইঞ্জিনগুলো আছে সেগুলো কালুরঘাট সেতু দিয়ে যাবে না। আমি চেষ্টা করছি আগামী সপ্তাহে দোহাজারী রুটে এক জোড়া ট্রেন চালানোর জন্য।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন আজাদীকে জানান, পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন ১১২টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে ১০৭টি রানিং রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০টি নতুন মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার আজাদীকে বলেন, চলতি ও আগামী অর্থবছর মিলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মোট ১৫০টি কোচ আসবে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আসবে ৫০টি এবং আগামী অর্থবছরে আসবে অবশিষ্ট ১০০টি কোচ। নতুন এই কোচ দিয়ে কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালানো হবে। রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে যুক্ত হয়েছে দেড়শটি মিটারগেজ কোচ। ২০২১ সালে এসেছে নতুন ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। এদিকে বর্তমানে দোহাজারী রুটে একটি ডেমু ট্রেন ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেলবাহী গাড়ি চলাচল করছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম-দোহাজারী এবং চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট রুটে সকল ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ১৯ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে দোহাজারী রুটে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দুই জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করত। ইঞ্জিন সংকটের কারণে এক বছর তা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইঞ্জিন সংকট কাটলে দ্রুত ট্রেন চালু হবে। তবে এখন পটিয়া পর্যন্ত একটি ডেমু ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। ডেমু ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৬টায় পটিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পটিয়ায় পৌঁছে সকাল ৭টায়। এরপর সকাল ৮টায় পটিয়া থেকে ছেড়ে সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছে। দ্বিতীয় ট্রিপে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ট্রেনটি। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পৌঁছে পুনরায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। চট্টগ্রামে পৌঁছে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দোহাজারী, হাশিমপুর, খান হাট, কাঞ্চন নগর, খরনা, চক্রশালা, পটিয়া, ধলঘাট, বেঙ্গুরা, গোমদন্ডি, জানালী হাট, ষোলশহর, ঝাউতলা ও চট্টগ্রাম স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করত। এসব স্টেশন দিয়ে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা ভোগ করেন যাত্রীরা। কিলোমিটার অনুযায়ী এ ভাড়া বহন করতে হয়। রেলপথে দোহাজারী থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার। সড়ক পথ থেকে ট্রেনের যাতায়াত কম খরচে হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছিল।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট রুটের রেললাইন মেরামত করার পর ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর দোহাজারী রুটে এক জোড়া লোকাল ট্রেন উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এরপর থেকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দুই জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করত। পরে এই রুটে ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন সংযোজন করা হয়। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দোহাজারী ও পটিয়া স্টেশনে উপস্থিত থেকে পৃথক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দুটি ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করেছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।