পূর্ণাঙ্গ হলো নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি

মানা হয়নি ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাও সদস্য

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রায় চার মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ৫৩ সদস্যের এ কমিটি গতকাল সোমবার অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এতে ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এর আগে গত ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ওইসময় তাদের পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটির আকার ৫১ সদস্যে উন্নীত করারও নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিতরা। তাদের দাবি, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মানা হয়নি ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি। এমনকি স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিগত আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন সদস্যকে বাদ রাখায়ও অসন্তোষ আছে তৃণমূলে। বঞ্চিতদের দাবি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং আহ্বায়কসদস্য সচিবের বলয়ের লোকদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। কমিটির ১১ জন আমীর খসরুর ও ৬ জন মীর হেলালের অনুসারী বলে পরিচিত।

মানা হয়নি ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি : বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালে। তখন এ ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তবে গতকাল পূর্ণাঙ্গ হওয়া কমিটিতে তা অনুসরণ না করে নগরের ৬টি থানার সভাপতিকে সদস্য রাখা হয়েছে। এরা হচ্ছেনসদরঘাট থানা বিএনপির সভাপতি সালাহউদ্দিন, পাঁচলাইশ থানা বিএনপির সভাপতি মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, হালিশহর থানা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন ডিপটি, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি হানিফ সাওদাঘর, ইপিজেড থানা বিএনপির সভাপতি সরফরাজ কাদের চৌধুরী রাসেল এবং চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আজম।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাও সদস্য : নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউছুপকেও সদস্য করা হয়েছে গতকাল ঘোষিত নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। ইউছুপ আজাদীর কাছে দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু এ বিষয়ে অবগত। এ প্রসঙ্গে বুলু আজাদীকে বলেন, মাস খানেক আগে ইউছুপ পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, আমি স্বাক্ষর করেছি। তবে কপি আমার কাছে নেই। তাকে সভাপতিকে কপি দিতে বলেছিলাম। এ বিষয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান আজাদীকে বলেন, তিনি বিএনপির জন্য চেষ্টা করছেন, তা মাসদেড়েক আগে আমাকে অবহিত করেছিল। বলেছি, যদি এরকম কিছু হয় আমরা পরবর্তীতে উদ্যোগ নেব। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবে কেন্দ্র।

বঞ্চিতদের যত অভিযোগ : বিগত কমিটির ১৩ যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে আবদুল মান্নান নামে একজন বাদ পড়েছেন। একজনকে সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে দুইজনকে সদস্য করা হয়। এছাড়া বিগত কমিটির সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন বাদ পড়েছেন।

আবদুল মান্নান আজাদীকে বলেন, ৫ আগস্টের আগে যারা রাস্তায় ছিল না তাদের রাখা হয়েছে কমিটিতে। এটা দলের নয়, ব্যক্তির কমিটি হয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমিটি দেখলেই বুঝা যায় যায়, কার সংসদীয় আসনের লোক বেশি। আমরা যারা দলের মিছিলমিটিংয়ে ছিলাম তাদের বাদ দেয়া হয়েছে, আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটিতে স্থান না পাওয়া নগর বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এম এ হামিদ আজাদীকে বলেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দু’জনেই কোটারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেদের পছন্দের লোককে স্থান দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদেরে রাজনৈতিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন করা নিয়ে যদি দলের হাইকমান্ডের জবাবদিহিতা থাকত সেক্ষেত্রে আমাকে বাদ দেয়ার সুযোগ ছিল না।

এদিকে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব দেখা যেত সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলীকে। ৫ আগস্টের আগে দলের ‘দুঃময়ে’ দপ্তর সামলাতেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হয়নি তাকেও। বিষয়টি নিয়েও অনেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

কি বলছেন আহ্বায়কসদস্য সচিব : নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, আমরা কেন্দ্রে প্রস্তাব দিয়েছি, কেন্দ্র অনুমোদন দিয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কারা বঞ্চিত জানি না, তবে যারা বঞ্চিত দাবি করছে তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা কেন্দ্রকে জানাতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে বলেন, ইউছুপকে বলেছি সে যদি বিএনপিতে থাকতে চায় স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সে বলেছে পদত্যাগ করেছে, বুলু (বেলায়েত হোসেন) জানে। থানার সভাপতিকে কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে এরশাদ উল্লাহ বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা। সামনে থানা কমিটিগুলো ভেঙে দেয়া হবে, তখন তারা আর থানায় থাকবে না।

নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, নেতা হওয়ার যোগ্যতা অনেকের আছে। কিন্তু কমিটির আকার তো ছোট। ধরলাম ৫০০ জনের যোগ্যতা আছে, কিন্তু কমিটির আকার তো ৫৩ জনের। এখন সবাইকে খুশি করা কি সম্ভব?

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং আহ্বায়কসদস্য সচিবের বলয়ের বাইরে থেকে কম সংখ্যক নেতাকর্মীকে কমিটিতে রাখা নিয়ে ‘বঞ্চিত’দের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাজিমুর রহমান বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। সবাইকে নিয়ে কমিটি করার চেষ্টা করেছি। সেখানে একটুৃ উনিশবিশ হতে পারে, শতভাগ যে পেরেছি তা বলব না। আমরাও তো মানুষ, ফেরেশতা হলে শতভাগ অথেনটিক হত।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা আছেন : যুগ্ম আহ্বায়করা হচ্ছেনমোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এম এ আজিজ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দীন, সাফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহিন, শওকত আলম খাজা (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত), ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, শিহাব উদ্দীন মুবিন (প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও মনজুরুল আলম মঞ্জু।

সদস্যরা হচ্ছেনডা. শাহাদাত হোসেন, আবুল হাশেম বক্কর, অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া, ইকবাল চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন জিয়া, এম এম হান্নান, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, আবুল হাসেম, ইসকান্দর মির্জা, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, মুজিবুল হক, মো. মহসিন, মো. খোরশেদুল আলম, মো. সালাউদ্দিন, গাজী সিরাজ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, সৈয়দ শিহাব উদ্দীন আলম, আনোয়ার হোসেন লিপু, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মশিউল আলম স্বপন, মোশাররফ হোসেন ডিপটি, মো. জাফর আহম্মদ, এ কে খান, গাজী আইয়ুব, মাহবুব রানা, এম এ সবুর, নুরু উদ্দিন হোসেন নুরু, মোহাম্মদ আবু মুসা, হানিফ সওদাগর, সরফরাজ কাদের চৌধুরী রাসেল, মোহাম্মদ আজম, মো. ইসমাইল বালি, মো. আশ্রাফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইউছুপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টার কাছে অগ্রগতি তুলে ধরল ৬ সংস্কার কমিশন
পরবর্তী নিবন্ধআন্দরকিল্লায় ভবনের ছাদে সেমিপাকা ঘরে আগুন