হবিগঞ্জে পদযাত্রার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার বিকালে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর চিড়িয়াখানা সড়ক এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহস্রাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। ২ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৮ জন আহত ও ৫ জন আটক হয়েছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
স্থানীয় নেতাদের দাবি, সংঘর্ষে হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম আউয়াল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাহবুবসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ বলছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলে সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদযাত্রার জন্য বিকালে বিএনপি ও এর অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জমায়েত হতে থাকেন। যদিও আগে থেকেই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ও আশাপাশে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিকাল ৫টার দিকে শায়েস্তানগর এলাকা থেকে ছাত্রদলের ব্যানারে একটি বিশাল মিছিল শহরের দিকে এগোলে পুলিশ প্রধান সড়ক থেকে মিছিলকারীদের দলীয় কার্যালয়ের রাস্তায় নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের বাধা না মেনে প্রধান সড়কে মিছিল করতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া শুরু করে। বিএনপির নেতাকর্মীরাও রাস্তার পাশে রাখা নির্মাণ কাজের পাথরের স্তূপ থেকে পাথর নিয়ে পুলিশের দিছে ছুড়তে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ সময় ট্র্যাফিক পয়েন্ট ও শায়েস্তানগর তেমুনিয়া এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেন এবং পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। সংঘর্ষের সময় ওই এলাকার লোকজন দিকবিদিক ছুটতে থাকেন। বন্ধ হয়ে যায় রাস্তার পাশের দোকান–পাট।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেনের দাবি, পুলিশের গুলিতে তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপির ১০–১৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করার দাবিও করেন আফজাল হোসেন।
হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করে হট্টগোল সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কী পরিমাণ রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া হয়েছে সে হিসাব এখনও করা হয়নি বলে জানান খলিল।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে। পুলিশ মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ লাঠিপেটাসহ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের তিন সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলের।
এদিকে, বিএনপির আহত ১৫ নেতাকর্মীর মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ। তিনি জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ধাওয়া দেয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়লে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন।