সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধজনক ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত একের পর এক অপরাধজনক ঘটনায় সচেতন সকল মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এখন নতুন করে সামনে এলো স্পিড লিমিট নিয়ে সড়কে পুলিশের ‘ক্যাশ কারবার’ বিষয়টি। গত ২৯ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের স্পিড লিমিটকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ এর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তা ভালো এবং ওয়ানওয়ে হওয়ার কারণে অধিকাংশ সড়কে গাড়ির স্পিড লিমিট লংঘিত হয়। আর ঘাটে ঘাটে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। পুলিশ মামলা না দিয়ে ‘ক্যাশ’ আদায় করায় স্পিড লিমিটের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধ করতে সরকার বিভিন্ন রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দিয়ে স্পিড লিমিট করে দিয়েছে। এর বেশি স্পিডে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। কোন সড়কে কোন ধরনের যানবাহন কত স্পিডে চলবে তা ঠিক করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগ থেকে ‘মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪’ শীর্ষক একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। উক্ত নির্দেশিকা অনুসরণ করে দেশের রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলার কথা। ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে গতি সংক্রান্ত এই নির্দেশনা জারি করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই স্পিড লিমিট দেশের কোনো সড়ক–মহাসড়কে অনুসরণ করা হয় না। বিশেষ করে সড়কগুলোর অবস্থা ভালো হওয়ার পাশাপাশি দেশে নতুন গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় সড়ক–মহাসড়কে হালকা যানবাহন কিংবা বাসগুলো ৮০ কিলোমিটার স্পিডে চলে না। এসব রাস্তায় প্রাইভেট গাড়িগুলো ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি বা বেশি বেগে চলাচল করে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সড়ক–মহাসড়কের ঘাটে ঘাটে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। সড়ক–মহাসড়কের জন্য সরকার হাইওয়ে পুলিশ গঠন করলেও এর সাথে থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিট বেশি গতির যানবাহন আটকে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ–দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ বেআইনী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সবসময়ই ছিল এবং আছে। তবে গত কয়েক বছরে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক–ইয়াবা চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানাবিধ অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। তবে এ সব অপরাধের দায়ে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার খবর খুব একটা জানা যায় না।
দিন দিন অপরাধ দমন না করে নিজেরা বারবার তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। এর মধ্য দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বা ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। পুলিশদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটি সহায়ক নয়।
যারা অপরাধে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা যতটুকু আছে সেটিও হারাবে।
অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজে ক্রমবর্ধমান ও বহুমুখী অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের জন্য এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশকে তার অভ্যন্তরীণ অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একশ্রেণির পুলিশের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা একদিকে যেমন পুরো পুলিশ বাহিনীকেই আস্থার সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সরকারকেও মাঝে মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছে।
স্পিড লিমিট নিয়ম চালু হয়েছে দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য। সামগ্রিকভাবে মানুষের স্বার্থেই প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু যদি সেই নিয়ম কেউ না মানে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে, আছে মামলা করার রীতি। কিন্তু তা না করে থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যে ‘ক্যাশ কারবারে’ লিপ্ত হয়েছে, তা নিতান্তই অপরাধ। মামলা হলে কিংবা শাস্তিস্বরূপ জরিমানা হলে তাতে যেন উপযুক্ত রশিদ প্রদান করার ব্যবস্থা থাকে। আশা করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।