পুলিশের আদলে হেয়ার কাটিং। সাথে বিপি নম্বরসহ পুলিশের আইডি কার্ড। কথাবার্তা চালচলনেও পুলিশি ভাব। তবে জসিম উদ্দিন নামে এই ব্যক্তিকে পুলিশের লোক মনে হলেও প্রকৃত অর্থে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা করেন তিনি। বিভিন্ন জুয়েলার্সে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে স্বর্ণ কেনেন তিনি। কিছু টাকা নগদ দিয়ে বাকি টাকা পরে দেবেন বলে দোকানিকে আশ্বস্ত করে সে টাকা আত্মসাত করেন।
সেরকমই এক ঘটনায় গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন সেই প্রতারক মো. জসিম উদ্দিন। নগরীর পাহাড়তলী এলাকার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাতের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার জসিম চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী গ্রামের মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে। নগরীর হালিশহরে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ন কবীর আজাদীকে বলেন, ‘পুলিশের মনোগ্রামযুক্ত ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সাথে প্রতারণা করে আসছিল জসিম। তার চুলের স্টাইল, চালচলনও পুলিশের মতো। কয়েকবছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর এ ধরণের প্রতারণামূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে সে’।
এর আগে পাহাড়তলী থানাধীন সরাইপাড়া হাজী ক্যাম্প সংলগ্ন নিউ কালুশাহ জুয়েলার্সের মালিক খোকন কুমার ধরের দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৬ ডিসেম্বর জসিম পাহাড়তলী থানার এসআই পরিচয়ে ৫০ হাজার ৬২৭ টাকা দামে একটি স্বর্ণের চেইন ও একটি আংটি ক্রয় করেন। এ সময় দোকানে থাকা বাদীর ছেলের কাছে ২০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করে এবং বাকি ৩০ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। পরে বাদী দোকানে এসে চেকটি দেখে সন্দেহ হওয়ার পর পাহাড়তলী থানায় ডিউটি অফিসারের নিকট ফোন করে জানতে পারেন জসিম নামে তাদের কোনো এসআই কর্মরত নেই।
জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম আজাদীকে বলেন, প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী বিষয়টি আমাদের খুলে বললে আমি উনাকে থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলি। পরে একটি অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রতারক জসিমকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া স্বর্ণ দুটি উদ্ধার করেছি। এছাড়া পুলিশের ভূয়া আইডি কার্ড, একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও ব্যাংকের কয়েকটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে।
পাহাড়তলী থানার ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসিম এর আগেও একাধিক প্রতারণার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এরমধ্যে পটিয়ায় একটি জুয়েলার্সের মালিকের কাছ থেকে একইভাবে স্বর্ণ কেনার নামে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রতারণার তথ্যগুলো বেরিয়ে আসবে।
পটিয়া উপজেলায় প্রতারণার শিকার রুপনা জুয়েলার্সের প্রোপাইটার অরুণ কান্তি ধর আজাদীকে বলেন, ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকায় একটি স্বর্ণের চেইন অর্ডার দেয়ার পর ১৩ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা পরে দেবে বলে চলে আসে । ওই সময় জসিম পটিয়াতে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়েছিল বলে জানান অরুণ কান্তি ধর। তিনি বলেন, আমিও উনাকে বিশ্বাস করে স্বর্ণের চেইন হাতে তুলে দিয়েছিলাম।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর তাকে গতকাল সোমবার মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দের মাধ্যমে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। জানা গেছে, পুলিশের আইডিতে জসিমের নাম উল্লেখ ছিল ছোটন ইসলাম জসিম। বিপি ৯৩১১৩১৫৬৯২৫। ঠিকানা বাঁশখালী দেখানো হয়েছে। তার ভিন্ন দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নামও ভিন্ন ছিল।