পুলিশ আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য

| মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

জুলাই আন্দোলনে ঢাকার মোহাম্মদপুরে মাহামুদুর রহমান সৈকত নামের এক আন্দোলনকারীকে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে বলে তার বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল১ এ সাবরিনার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা এ মামলায় সাবরিনা ৪৯তম সাক্ষী। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভাই মাহামুদুর রহমান সৈকতের সঙ্গে তিনিও অংশগ্রহণ করেন বলে জানান। সাবরিনা বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার তার ভাই দুপুরের খাবার খেয়ে বাসা থেকে মোহাম্মদপুর নুরজাহান রোডের দক্ষিণ মাথায় আন্দোলনে যোগ দিতে যান। তখন তার বাবা গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সৈকতের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দেন। একপর্যায়ে একজন অপরিচিত ব্যক্তি সৈকতের ফোন রিসিভ করেন এবং আমার বাবাকে জানান যে, এই ফোনটি যার, তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দ্রুত হাসপাতালে আসেন, নইলে লাশও পাবেন না। পুলিশ খুব কাছ থেকে আমার ভাই সৈকতকে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এরপর তার বাবা তাদের এক আত্মীয়কে ওই হাসপাতালে যেতে বলেন। খবর পেয়ে তিনিও হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালে আমি আমার ভাইসহ পাঁচজনের লাশ দেখতে পাই। আমার ভাইয়ের মাথায় গুলি লেগেছিল। তার মাথায় মোটা রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ ছিল। অন্য লাশগুলোর প্রত্যেকের মাথা, পেট ও বুকে গুলির চিহ্ন দেখতে পাই। আমি যতক্ষণ হাসপাতালে ছিলাম, ততক্ষণ অনবরত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেখি। ওইদিন রাত ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে তার ফুফাতো ভাই লাশ বুঝে নেন এবং পরদিন ২০ জুলাই সৈকতের জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে জামে মসজিদ কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাবরিনা বলেন, সরকার পতনের কয়েক মাস পর তিনি শেখ হাসিনার কিছু ফোন রেকর্ড শুনতে পান। আল জাজিরা তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় আল জাজিরার সাংবাদিক তাকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপ শোনান। সেই ফোনালাপে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যায়িত করে বলেন, ইংল্যান্ডের স্টাইলে স্টুডেন্টদেরকে হত্যা করা হবে। অপর ফোনালাপে মেয়র তাপসকে শেখ হাসিনা ড্রোন এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের লেথাল উইপন ব্যবহার করে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। ওই কথোপকথনে শেখ হাসিনা মোহাম্মদপুর এলাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার আরেকটি ফোনালাপ শুনতে পান। ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি স্টুডেন্টদের উপর বোমা ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। সৈকতের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আল জাজিরা সাবরিনার যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, তার কিছু অংশ একটি ডকুমেন্টারি হিসেবে তাদের পেইজে প্রকাশ করে, বলেন সাবরিনা।

সাবরিনা তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডে নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করেন। যারা তাদের নির্দেশ মেনে নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্রজনতার উপর লেথাল উইপন ব্যবহার করেছে, তাদেরও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনকে পশ্চিমা চার দেশের স্বীকৃতি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরো ৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত